নীলফামারী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল বন্ধ করতে একটি মহলের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এবং স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। নীলফামারীর সর্বস্তরের জনগণ ও শিক্ষার্থীদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করে।
সমাবেশে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর জেলা সভাপতি ডা. সোহেলুর রহমান সোহেল বলেন, ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত নীলফামারী মেডিকেল কলেজ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি নীলফামারীসহ আশপাশের জেলার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। জানা যাচ্ছে দেশের কিছু সরকারি মেডিকেল কলেজ বন্ধ করতে আলোচনা করছে সরকার। যেখানে আমাদের প্রতিষ্ঠানটিও অন্তর্ভুক্ত।
তিনি আরও বলেন, শুরুতে জনবল ও অবকাঠামোগত ঘাটতি থাকলেও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিরলস প্রচেষ্টায় রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত পেশাগত পরীক্ষাগুলোয় নীলফামারী মেডিকেল কলেজ বরাবরই প্রশংসনীয় ফল অর্জন করেছে। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে প্রথম পেশাগত পরীক্ষায় ২৪টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে পাশের হারে নীলফামারী মেডিকেল কলেজ প্রথম স্থান অর্জন করে। এরপরও অবকাঠামো এবং আবাসন অসুবিধার অজুহাতে প্রতিষ্ঠানটিকে বন্ধের পাঁয়তারা চালাচ্ছে একটি মহল।
মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী হরি মোহন রায় বলেন, কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকলেও নবনির্মিত সরকারি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) ভবনটি অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ওই ভবনে দুটি লেকচার গ্যালারি, ১০টি শ্রেণি কক্ষ, একটি লাইব্রেরি, একটি কনফারেন্স রুম, অফিস কক্ষ, অধ্যক্ষের কার্যালয় ও বিভিন্ন বিভাগের অফিস রুমসহ একটি একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবনে চলছে কলেজ ও হাসপাতালের কার্যক্রম। আইএইচটি ভবনের পাশে চারতলা ভবনে ১৫০ জন ছাত্র এবং পাঁচতলা ভবনে ২০০ জন ছাত্রীর মানসম্মত আবাসিক সুবিধা রয়েছে। ১৮ বিভাগে ৫৬ শিক্ষক কর্মরত আছেন।
নীলফামারী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মারুফ পারভেজ প্রিন্স বলেন, এরই মধ্যে নীলফামারী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের (আইএইচটি ভবন) সঙ্গে লাগোয়া ২৭ দশমিক ৪৬ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মাস্টারপ্ল্যানে প্রস্তাবিত ৩৫টি স্থাপনার নির্মাণ কার্যক্রম শুরুর জন্য প্রশাসনিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এরপরও একটি মহল প্রতিষ্ঠানটিকে বন্ধের পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সভাপতি আ খ ম আলমগীর সরকার, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আল ফারুক আব্দুল লতিফ, জেলা জজ আদালতের জিপি আবু মো. সোয়েম, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শেফাউল জাহাঙ্গীর আলম শেফু, পৌর বিএনপির সভাপতি মাহবুব উর রহমান, সদর উপজেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আহমেদ রায়হান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোর্শেদ আযম, ছাত্রনেতা শ্রেষ্ঠ সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ মেহেদী হাসান আশিক, নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম, নীলফামারী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ইন্টার্ন ডক্টরস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ডা. আহসান হাবিব সোহান, শিক্ষার্থী অর্পিতা চৌধুরী, হরি মোহন রায়, বাঁধন আচার্য, কাজী রাহাতুল জান্নাত, ইয়ামান ইসলাম ইমন, জান্নাতুল ফেরদৌস জীবন প্রমুখ।
বক্তারা নীলফামারী মেডিকেল কলেজ বন্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের প্রভাবে বর্তমান সরকার এমন সিদ্ধান্ত যে দিনই নেবে সেদিন থেকেই নীলফামারী জেলা ‘ব্লকেড’ ঘোষণা করা হবে। সারা দেশের সঙ্গে সড়কপথ, রেলপথ ও আকাশপথের যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বক্তারা আরও বলেন, আমাদের প্রত্যাশা নীলফামারীসহ আশপাশের জেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা বিবেচনায় দ্রুত কলেজের স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করে জনবল নিয়োগ ও সরঞ্জামের মানোন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি সচল রাখবে সরকার। একই দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
মন্তব্য করুন