সাতক্ষীরায় শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুর রব পলাশের বিরুদ্ধে বিডিএস সার বীজ, টিসিবি, ওএমএস, ফেয়ার প্রাইজসহ ১৫টি লাইসেন্স নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত পলাশ তালা উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তৎকালীন এমপি ইঞ্জিনিয়ার মুজিবর রহমান ও মুস্তফার ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন আব্দুর রব পলাশ। পরে নিজের পরিবার আত্মীয়স্বজনের নামে টিসিবি, ওএমএস, ফেয়ার প্রাইজ ও বিএডিসি সার বীজের ১৫টি লাইসেন্স করে নেয়। একপর্যায়ে সিন্ডিকেট করে প্রায় ২০-৩০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক বনে যান তিনি।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পলাশ নিজের নামে দুইটি টিসিবি লাইসেন্স করেছেন। একটি পাটকেলঘাটা বাজারে মুন ট্রেডার্স অপরটি আশাশুনি কুল্লা গুনগরকাটিতে মেসার্স রাদ এন্টারপ্রাইজ।
তাছাড়া তার আপন ছোট ভাই চাকরিচ্যুত পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুর রউফ পল্টুর শালা জাহিদ হাসানের নামে মেসার্স জাহিদ স্টোর, খেশরা ইউনিয়নে বড়কাশিপুর মেঝো শ্যালিকা শালী শিরিনার নামে মেসার্স আলিফ ট্রেডার্স, খালাত ভাই হাবিবুর রহমানের নামে মেসার্স হাবিব স্টোর, মামা রবিউলের নামে মেসার্স মাওয়া স্টোর, খালু মোক্তার আলীর নামে মেসার্স আবিদ মুদিখানা স্টোর ও ছোট ভাই আব্দুর রউফের নামে মেসার্স মাছুরা স্টোরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
টিসিবি লাইসেন্স ছাড়া পলাশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আলীপুরে দুটি ওএমসএস লাইসেন্স, লাবসায় মেসার্স হাবিব এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ওএসমএস লাইসেন্স, পাটকেলঘাটা বাজারে ২টি বিএডিসি সার বীজ লাইসেন্স।
আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় সিন্ডিকেট করে গড়ে তোলা এসব লাইসেন্স নিয়ন্ত্রণ করেন শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুর রব পলাশ। কাউকে মাসিক একটা নামমাত্র টাকা আবার কাউকে আওয়ামী লীগের ভয় দেখিয়ে হুমকি দিতেন।
তাছাড়া বরাদ্দ নিয়ম না মেনে পলাশ কুমিরা হাটবাজার, বিনেরপোতা মাছ বাজার ও পাটকেলঘাটা কাঁচাবাজার ইজারা নিয়ে নেন। এসব হাটবাজার ইজারা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে সংসদ সদস্য মুস্তাফা লুৎফুল্লাহ ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নজরুল ইসলামের ছত্রছায়ায় সরুলিয়া ও আশাশুনিতে কয়েক একর কৃষি জমি কেনেন। একাধিক পেট্রোল পাম্পের শেয়ার ও রাবেয়া এন্টারপ্রাইজ নামে ট্রাকও রয়েছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর গা ঢাকা দিয়েছে শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুর রব পলাশ। কিন্তু তিনি তার সব অবৈধ ব্যবসা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বহাল তবিয়তে পরিচালনা করছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের তহবিল থেকে অনুদান নেওয়ার জন্য বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা, মন্দির এতিমখানার নামে ৩০-৪০টি আবেদন করেন তিনি। তালা উপজেলার ইউএনও অফিসের অফিস সহায়ক মনিরের যোগসাজশে কয়েক বছর ধরে সব সরকারি বরাদ্দে ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে অনুদান নেন এ শ্রমিক লীগ নেতা।
আব্দুর রব পলাশ নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। সর্বশেষ তালা উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তালা উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক হিসেবে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা চেয়ে মনোনয়নপত্র কেনেন। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে পরাজিত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুর রব পলাশের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা না বলে এড়িয়ে যান।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাসেল বলেন, আব্দুর রব পলাশের বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি। আমি বিডিএস সার বীজ, টিসিবি, ওএমএস, ফেয়ার প্রাইজসহ বিভিন্ন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি খতিয়ে দেখব। আমার অফিসের কেউ বরাদ্দ আত্মসাতে জড়িত থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন