বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। এ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই বিএনপি মনে করে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের পর হওয়া উচিত।
আগামী নির্বাচনে বিএনপি দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জিতবে বলে প্রত্যাশার কথা জানান তিনি। কালবেলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন মিল্লাত। তিনি জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন।
কালবেলা : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে নাগাদ হবে এবং বিএনপি কতটি আসনে জয়লাভ করবে বলে বিশ্বাস করেন? রশিদুজ্জামান মিল্লাত : ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার প্রশ্নটা বেশ ক্রিটিক্যাল, কারণ জনগণের ভোটে মানুষ নির্বাচিত হয় এবং ম্যাচিউরিটি পেলে সরকার গঠন করে। আমরা জাতীয়তাবাদী দল মনে করি, নির্বাচন যদি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অবাধ হয় আমরা সেটাতে আশা করছি যে- আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যেভাবে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে যে প্রত্যয় তিনি ব্যক্ত করেছেন তাতে করে মনে করি বাংলাদেশের বেশিরভাগ জনগণ আমাদের সঙ্গে আছেন। জনগণ আমাদেরকে ভোট দিয়ে সাহায্য করবে। সেই কারণে আমরা মনেকরি, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে আমাদের দল ক্ষমতায় আসবে। ক্ষমতায় আসলে কতগুলো আসন আমরা পাবো তা বলা মুশকিল। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সেজন্য আমরা মনেকরি মানুষ যাকে ভোট দেবে সে-ই নির্বাচিত হবে। কতটা আসন আমরা পাবো সে বিষয়ে আপনাকে স্পেসিফিকেলি বলতে পারব না। তবে আশা করি টু থার্ড মেজরিটির উপরেই আমাদের পাওয়ার কথা।
কালবেলা : সরকার গঠনের পর বিএনপি সর্বপ্রথম কী কী কাজ করবে? রশিদুজ্জামান মিল্লাত : আপনি দেখেছেন যে আমাদের ৩১ দফার মধ্যেই সবগুলো আছে। যেমন ধরেন রাজনীতির মধ্যে ফ্যাসিবাদী কোনো আচরণ যাতে না থাকে সে ধরনের আমাদের একটা সংস্কার প্রস্তাব আছে। আমরা সরকার গঠন করতে পারলে প্রথমেই সংসদে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্যের একটা সংশোধনী আসবে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের যে প্রস্তাবনা ৩১ দফায় আছে তা আমরা প্রথম দিকেই করবো।
তিনি বলেন, তারপর জনগণের জন্য ক্রমান্বয়ে কৃষি খাতে উন্নয়ন, শিল্পোন্নয়ন এবং মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যেসব মৌলিক অধিকার মানুষের জন্য আমরা ৩১ দফায় বর্ননা করেছি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় এমন ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন- তিনি প্রথমে তৃণমূল মানুষ, কৃষক শ্রমিক থেকে শুরু করে গরীব মানুষের কাজে লাগবে এমন সব সংস্কারগুলো আমরা আগে করবো। তাতে করে মনে হয়- তিনি প্রথমে হাত দেবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে, তারপর শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে। বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে তিনি কাজ করবেন।
কালবেলা : বিএনপি কেন জাতীয় নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে? রশিদুজ্জামান মিল্লাত : দেখেন এই সরকার একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং এ সরকার দ্বারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। যদিও আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। সরকারকে সবাই মিলেই সহযোগিতা করছি। এর মধ্যে বিএনপি স্পেশালি তার মধ্যে সহযোগিতা বেশি করছে, তাতে করেও তারা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারছে না। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে আপনারা নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে দেখেছেন কতগুলো অকারেন্স হয়ে গেল সেটাকে অ্যাড্রেস করতে যৌথ অভিযান চালানো হচ্ছে। সেগুলো আরবান এরিয়াতে বেশি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি বৃহৎ আয়োজন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সিটি কর্পোরেশন পর্যন্ত নির্বাচন করা একটি বিরাট যজ্ঞ। আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এ সরকার দিয়ে এ কাজ করা অসম্ভব। সবচেয়ে ভালো আমরা এ সরকারকে অনুরোধ করেছি, যত শীঘ্রই জাতীয় নির্বাচন দিয়ে যারা সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করবে তার যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন করে তাহলে তাদের নিয়ন্ত্রণ ভালো থাকবে, তাদের প্রতিনিধি থাকবে, এমপি থাকবে, দলের লোক থাকবে সবাই মিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে আইনশৃঙ্খলা সঠিক রেখে স্থানীয় নির্বাচন করা সম্ভব। সেজন্য আমরা মনেকরি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো অবনতির কারণে যাতে ফ্যাসিস্টের উত্থান না হয় বা দেশে যাতে কোনো অরাজকতা সৃষ্টি না হয়। সেজন্যই আমরা মনেকরি, জাতীয় নির্বাচন হওয়ার পরেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।
কালবেলা : অনিয়মে জড়িত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি কি চলমান থাকবে? রশিদুজ্জামান মিল্লাত : আমাদের দলীয় যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, যারা আছে আপনারা দেখেছেন তাদের বিরুদ্ধে, প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সতর্কীকরণ, বহিষ্কার, সদস্যপদ স্থগিত ইত্যাদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বৃহৎ একটা দল, সারাদেশে অসংখ্য নেতাকর্মী কেউ যাতে অনিয়ম যুক্ত না হয়, শৃঙ্খলা রক্ষা করতেই তাদের বিরুদ্ধে এসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটা অব্যাহত থাকবে, দল সরকার গঠণ করলেও অব্যাহত থাকবে। দলীয় কোনো নেতাকর্মী শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে, সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে গেলে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে নির্দেশনা দিয়েছেন, যে বার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটিকে তাতে কেউ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি অব্যাহত থাকবে।
কালবেলা : দলীয় নেতাকর্মী এবং দেশবাসীর প্রতি আপনার আহ্বান কী থাকবে? রশিদুজ্জামান মিল্লাত : দেশবাসীর প্রতি আমার আহ্বান থাকবে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, জিয়ার আদর্শের দল সেই দলের প্রধান সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং খালেদা জিয়া দেশ পরিচালনার সময় আমরা চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এবং শিল্প বিপ্লব, শিক্ষার হার বাড়ানো এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা, শান্তি বজায় রাখার জন্য, মৌলিক অধিকার বজায় রাখার জন্য যে চেষ্টা অব্যাহত তিনি রেখেছিলেন যেটা ফ্যাসিস্ট সরকার এসে, শেখ হাসিনার সরকার এসে পরপর তিনটি নির্বাচনকে প্রভাবিত করে এবং বিনা ভোটে পনেরো বছর তারা যে অত্যাচার, গুম, খুন হত্যা, ডাকাতি রাহাজানি লুটপাট দেশের সম্পদ পাচার ইত্যাদি করে দেশকে যে ফোকলা করেছে সেটা যাতে আর না হয়। আমার আবেদন থাকবে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমাদের দল এখন সুসংগঠিত। তিনি আমাদের কনক্লুসিভ বক্তব্যে বলে দিয়েছেন আমাদের কী করতে হবে। আমরা যেন ফ্যাসিস্ট সরকারের মতো কোনো কাজ না করি তাহলে জনগণ আমাদেরও প্রত্যাখান করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আমার নিবেদন থাকবে এই জাতীয়তাবাদী দলের বিরুদ্ধে আগেও ষড়যন্ত্র হয়েছে, এখনও ষড়যন্ত্র হচ্ছে, চলছে মিথ্যা প্ররোচনায় যাতে যাচাই-বাছাই করে কান দেয়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের যে আদর্শ আমাদের রয়েছে, আমাদের যে ১৯ দফা রয়েছে, বর্তমান ৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামতের কাঠামো রয়েছে, সেগুলো বিবেচনা করে আপনারা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে বিজয়ী করে বাংলাদেশ যাতে একটি সুন্দর, সাবলীল গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয় সেজন্য আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।
কালবেলা : আপনাকে ধন্যবাদ। রশিদুজ্জামান মিল্লাত : আপনাকে এবং দেশবাসীসহ বিএনপির সব নেতাকর্মী সমর্থককে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা।
মন্তব্য করুন