রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকায় বন্যপ্রাণীর আক্রমণে স্থানীয় এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সোমবার (৩ মার্চ) ভোর আনুমানিক ৪টার দিকে জুরাছড়ি উপজেলার দুর্গম ৩ নম্বর মৈদং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মৌন আদাম এলাকার বনে এ ঘটনা ঘটে।
বন্যপ্রাণীর আক্রমণে আহত ব্যক্তির নাম রাঙা চোগা চাকমা (৩৫)। তিনি মৌন আদাম এলাকার মঙ্গল চন্দ্র চাকমার ছেলে। ৩ নম্বর মৈদং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সাধনা নন্দ চাকমা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মৌন আদামের স্থানীয় বাসিন্দা শান্তি কুমার চাকমা বলেন, সোমবার ভোর আনুমানিক ৪টার দিকে রাঙা চোগা মুরগি ঘর মেরামতের জন্য বাড়ির পাশে জঙ্গল থেকে গাছ সংগ্রহ করতে গেলে সে বাঘের মুখোমুখি হয়। বাঘ তার ওপর আক্রমণ করলে তার মুখের বাম পাশের এক অংশ ছিঁড়ে যায়। সে সঙ্গে বাম কান ও চোখের একটা অংশ এবং হাতের তালু ছিঁড়ে গেছে। এ ছাড়া শরীরের বেশ কয়েকটি জায়গায় জখম হয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। রাঙা চোগা চিৎকার করলে বাঘটি তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এলাকাটি খুব দুর্গম হওয়ায় এখানে যাতায়াত ব্যবস্থা খুব নাজুক। পায়ে হাঁটা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থাও নেই। আমরা তাকে উদ্ধার করে আমাদের গ্রাম থেকে ২ ঘণ্টা পায়ে হেঁটে তাকে কাঁধে করে ফকিরাছড়া গ্রামে নিয়ে গেছি। বর্তমানে সেখানে এক স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। ক্ষত স্থানগুলোতে বহু সেলাই করতে হয়েছে। তবে অবস্থা খুব গুরুতর।
বন্যপ্রাণীটি বাঘ কিনা জানতে চাইলে তিনি আহত ব্যক্তির বরাত দিয়ে বলেন, আহত ব্যক্তি রাঙা চোগা নিজেই বাঘটিকে দেখেছে বলেছেন। আমি নিজেও ঘটনাস্থলে গিয়ে বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছি। আহত ব্যক্তিটি আমার মামাতো ভাই হয়।
৩ নম্বর মৈদং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সাধনা নন্দ চাকমা বলেন, সোমবার ভোরে গাছ সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে রাঙা চোগা নামে স্থানীয় একজন গুরুতর আহত হয়েছে। তার মুখ, কান, চোখ এবং হাতসহ শরীরের বেশ কিছু অংশ ছিঁড়ে গেছে। গ্রামবাসী কাঁধে করে ২ ঘণ্টা পাঁয়ে হেঁটে ফকিরাছড়ার এক স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। সে বর্তমানে ওখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।
সুন্দরবনে বেঙ্গল টাইগার গণনা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুপ্রিয় চাকমা বলেন, বন্যপ্রাণীর আক্রমণে আহত ব্যক্তি সুস্থ হলে ওনার সাক্ষাৎ নিলে জানা যাবে কী ছিল প্রাণীটি। তবে ইন্ডিয়ান লেপার্ডও হতে পারে।
রাঙামাটির উপবন সংরক্ষক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তিকে যেভাবে জখম করেছে এতে বোঝাই যাচ্ছে প্রাণীটি বড় ছিল। তবে প্রাণীর শরীর ডোরাকাটা নাকি ছাপ ছাপ ছিল, পায়ের ছাপ দেখতে পারলে বোঝা যেত। আমরা ধারণা করছি, এটি লেপার্ড হতে পারে।
মন্তব্য করুন