জামালপুরে রাজিব পরিবহনের সকল বাস সার্ভিস বন্ধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। এ সময় তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে স্থানীয় ছাত্র-জনতা। মানববন্ধন চলাকালে ছাত্র এবং বাস শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিক সমিতি।
সোমবার (০৩ মার্চ) দুপুরে পৌর শহরের আন্ত:জেলা বাস টার্মিনালের সামনে জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এই ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, রোববার (০৩ মার্চ) সকালে জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের জয়রামপুর এলাকায় জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঢাকা থেকে জামালপুরগামী রাজিব পরিবহণের একটি বাসের সঙ্গে একটি যাত্রীবাহী ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ইজিবাইক চালক আবুল কাসেমের মৃত্যু হয়। রাজিব বাসের ধাক্কায় ওই ইজিবাইক চালকের মৃত্যুর ঘটনায় রাজিব পরিবহনের সকল বাস সার্ভিস বন্ধ ও জামালপুরের বাস সার্ভিস সংস্কারের ৬ দফা দাবিতে সোমবার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখা জামালপুর আন্ত:জেলা বাস টার্মিনালের সামনে জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে।
অবরোধ কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার সদস্য সচিব আবিদ সৌরভের নেতৃত্বে ছাত্ররা অংশ নেয়। ঘণ্টাব্যাপী অবরোধের এক পর্যায়ে বাসের শ্রমিকদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় মনির (৩২) নামে বাসের এক শ্রমিক আহত হয়। অবরোধ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলাকালে শেরপুর-জামালপুর-টাঙ্গাইল রুটে ও জামালপুর জেলার সাত উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে প্রশাসনের কাছে জেলার সকল বাস, চালক, শ্রমিক ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি। প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ, পালটা অবরোধ ও উভয় পক্ষের উত্তেজনা শেষে সড়ক অবরোধ থেকে সরে আসে উভয় পক্ষ। কিন্তু রাজধানী ঢাকাসহ সকল রুটে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার বাস চলাচল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার সদস্য সচিব আবিদ সৌরভ বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা, বাসের বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনায় মৃত্যু, যাত্রীদের সাথে বাসের চালক ও শ্রমিকদের খারাপ ব্যবহার বন্ধ, বাসে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ জামালপুরের বাস সার্ভিস সংস্কারে ৬ দফা দাবিতে এবং রাজিব পরিবহণের সকল বাস সার্ভিস বন্ধের দাবিতে আমাদের অবরোধ কর্মসূচি চলছে।
তাদের ৬ দফা দাবি হলো- সরকারি গেজেট অনুযায়ী দূরপাল্লা বাসভাড়া ২.২০ টাকা (প্রতি কিলোমিটার ) বাস্তবায়ন করতে হবে । গেট লক সার্ভিস করতে হবে।নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া যত্রতত্র যাত্রী উঠা বা নামানো যাবে না। ফিটনেসবিহীন, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি বাজেয়াপ্ত ও বেপরোয়া গতিতে যানচলাচল বন্ধ করতে হবে। পরিবহণ মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের পুনর্গঠন করতে হবে। জেলার অভ্যন্তরীণ সিএনজি রুটগুলোতে ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী ভোগান্তি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি বাসে সিসি ক্যামেরা নিশ্চিত করা যাতে যাত্রী হয়রানি মনিটরিং করা যায়। গাড়ির স্টাফদের আইডি কার্ড বাধ্যতামূলক করা।
তিনি বলেন, জামালপুরে রাজিব বাসের কারণে প্রাণ হারাচ্ছে অনেকে। তাই রাজিব বাস বন্ধের দাবি জানাতে আমরা আন্দোলনে নেমেছি। এছাড়াও পুরো জেলায় বাস সার্ভিস সংস্কারের জন্য এই আন্দোলন। কিন্তু এসময় বাস শ্রমিকরা আমাদের ওপর চড়াও হয়। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি সব বাস চললেও রাজিব বাস চলতে দেওয়া হবে না। এর ব্যত্যয় ঘটলে আরও বড় আন্দোলনে যেতে পারি।
জামালপুর জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শুভ বলেন, আলোচনার জন্য ডাকা হলে উল্টো মারমুখী অবস্থানে যায় ছাত্ররা। এতে আহত হয় এক শ্রমিক। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে সারা জেলার সব বাস-মিনিবাস ও সিএনজি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জামালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবু ফয়সল মো. আতিক বলেন, বিকেল ৩টার দিকে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়াও বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন