বরিশালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সুরুজ গাজী নামের এক যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ও তার পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন নয়ন গাজী নামের এক ছাত্রদল নেতা। রোববার (০২ মার্চ) রাত ৮টার দিকে নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউনিয়া শেরে বাংলানগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনের এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা হামলাকারীদের বসতঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
নিহত যুবদল নেতা সুরুজ গাজী (৩৬) ওই এলাকার কাঞ্চন গাজীর ছেলে এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। এ ছাড়া গুরুতর আহত ছাত্রদল নেতা মো. নয়ন গাজী (৩২) একই এলাকার তসলিম গাজীর ছেলে। তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সোমবার সকালে নিহতের বড় ভাই শাহিন গাজী বাদী হয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউনিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শাহিন হাওলাদার ওরফে সোনা শাহিন, তার দুই ছেলে এবং স্ত্রীসহ সাতজনকে অভিযুক্ত করেছেন। এ ছাড়া আরও ৭-৮ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার (০৩ মার্চ) সকালে দুজনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম।
আহত এবং স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, হামলাকারী শাহিন হাওলাদার ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক। তবে তার এক ছেলে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। এ ছাড়া বরিশাল নগরীতে স্বর্ণ প্রতারক চক্রের অন্যতম হোতা শাহিন হাওলাদার ও তার স্ত্রী সাবানা বেগম।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং দেনা-পাওনা নিয়ে যুবদল নেতা সুরুজ গাজী ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শহিন হাওলাদারের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। নয়ন গাজী ও সুরুজ গাজীর সঙ্গে জমির ব্যবসার টাকা নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শাহিন হাওলাদার ওরফে সোনা শাহিন, তার ছেলে লিয়ন, ইমরান, স্ত্রী সাবানাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিরোধ হয়। এ নিয়ে রোববার ইফতারের পর তাদের মধ্যে ঝগড়া বাধে।
একপর্যায়ে শাহিন ও তার পরিবারের সদস্যসহ ১০-১৫ জন মিলে সুরুজ ও নয়ন গাজীর ওপর অতর্কিত হামলা করে। তারা দুজনকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক সুরুজ গাজীকে মৃত ঘোষণা করেন।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. নাজমুল হোসাইন বলেন, হামলায় সুরুজ নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। তাছাড়া আহত নয়নকে সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে, হত্যাকাণ্ডের জেরে রাতেই স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা অভিযুক্ত শাহিনের বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা রাতেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ঘটনার পর থেকেই হামলাকারী পরিবার আত্মগোপনে থাকায় তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ রয়েছে, শহীন দীর্ঘদিন ধরে সোনা প্রতারক চক্র নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এর পাশাপাশি এলাকায় জমির দালালিও করেন তিনি। শাহিন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হলেও গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের ক্ষমতার আমলে কোনো মামলা হয়নি তার বিরুদ্ধে। বরং তিনি আওয়ামী লীগ এবং কতিপয় পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্ত চলছে। সোমবার দুপুরে নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাছাড়া বাদ আসর নিজ এলাকায় মরহুমের নামাজে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে।
নগর পুলিশ প্রধান বলেন, শাহিন হাওলাদার সোনা প্রতারক চক্রের সদস্য বলে শুনেছি। বেশ কয়েকজন এ বিষয়ে অভিযোগ করেছে। তবে তার বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত কোনো মামলা নেই। কিন্তু নিহত যুবদল নেতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আমলে একটি রাজনৈতিক মামলা ছিল। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য করুন