বগুড়ার আলোচিত তুফান সরকারকে আদালতের নারী হাজতখানায় রেখে পরিবারের পাঁচ সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সে সঙ্গে আদালত পুলিশের সহকারী টাউন উপপরিদর্শক (এটিএসআই) জয়নাল আবেদিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
সোমবার (৩ মার্চ) বিকেলে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান কালবেলাকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
তুফান সরকার বগুড়া শহর যুব শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর এলাকার মজিবর সরকারের ছেলে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ ১৭টি মামলা চলমান রয়েছে।
আটকরা হলেন- তুফান সরকারের শাশুড়ি তাসলিমা বেগম, তার স্ত্রী আইরিন আক্তার সোনালী, স্ত্রীর বড় বোন আশা বেগম ও শ্যালক মো. নয়ন এবং আইনজীবীর সহকারী হারুনুর রশিদ।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান বলেন, কোর্টের নারী কাস্টোডিতে নারীদের সঙ্গে একটি মামলার আসামিকে রাখা ছিল। এখানে আইনত অপরাধ হয়েছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার (৩ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দ্বিতীয় তলায় দেখা যায়, নারী হাজতখানার দরজায় কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তার ভিতরে তুফান সরকার, তার স্ত্রী, ছোট বোন, শাশুড়ি, স্ত্রীর বড় বোন এবং একজন আইনজীবীর সহকারী বসে খোশগল্পে মেতে ওঠেছেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে আদালত চত্বরে হৈচৈ পড়ে যায়। পরে তাড়াহুড়ো করে তুফান সরকারকে প্রিজনভ্যানে করে কারাগারে পাঠানো হয় এবং তার পরিবারের সদস্যরা সটকে পড়েন।
বগুড়ার আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সকালে তুফান সরকারকে আদালতে হাজিরার জন্য কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। দুপুরের মধ্যেই কারাগার থেকে আনা সব হাজতিকে প্রিজনভ্যানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। হাজতখানার চাবি এটিএসআই জয়নাল আবেদিনের কাছে থাকে। তুফান সরকারকে কারাগারে না পাঠিয়ে তাকে নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ করে দেয় জয়নাল আবেদিন। আদালতের সবার অগোচরে ঘটনাটি ঘটে।
এ প্রসঙ্গে বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, পুরুষ আসামিকে নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে এটিএসআই জয়নাল আবেদিনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশের আরও যাদের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে এক কলেজছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণ করে তুফান সরকার। পরে সালিশ ডেকে ধর্ষিতা ও তার মাকে চরিত্রহীনা উল্লেখ করে তাদের মারধর করে এবং মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয় তুফান সরকার। সেই ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে তুফান সরকার গ্রেপ্তার হয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় একজন দর্শনার্থীর মাধ্যমে স্যালাইন পাইপ দিয়ে ফেন্সিডিল সেবন করতে গিয়ে কারারক্ষীদের হাতে ধরা পড়ে সেই দর্শনার্থী। সেই ঘটনাতেও আলোচনায় আসে তুফান সরকার। তুফান সরকারের নামে ১৭টি মামলা রয়েছে। ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে চক সুত্রাপুর বাড়ি থেকে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
মন্তব্য করুন