সাভারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার সাজানো মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন ভুক্তভোগী দুই সাংবাদিক। রোববার (২ মার্চ) দুপুরে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক বেগম ইসরাত জাহান মুন্নি মামলা থেকে দুই সাংবাদিককে অব্যাহতির আদেশ দেন।
অব্যাহতি পাওয়া দুই সাংবাদিক হলেন- দৈনিক তৃতীয় মাত্রার প্রতিবেদক সোহেল রানা ও সাংবাদিক জাহিন সিংহ।
আদালতে বিবাদিদের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আল মামুন রাসেল।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, সোহেল রানা ও জাহিন সিংহ’র বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের পক্ষে কোনো তথ্য প্রমাণাদি উপস্থাপন করতে না পারায় নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীমের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় বিবাদিদের অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। স্বৈরাচার সরকারের আমলে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করতে চাপিয়ে দেওয়া মিথ্যা মামলায় কোনো ধরনের দালিলিক প্রমাণ ছাড়াই তদন্ত কর্মকর্তা এক তরফা রিপোর্ট প্রদান করেন। শুধুমাত্র সংবাদ প্রকাশের কারণেই দুই সাংবাদিককে মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হয়। শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত আজ দুই সাংবাদিককে অব্যাহতি প্রদান করলেন। আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।
এর আগে, ২০২২ সালের ৯ আগস্ট রাতে আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকার এক বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, মারধর ও লুটপাটসহ নারীদের শ্লীলতাহানীর অভিযোগে পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার শফিউল আলম সোহাগসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তৎকালীন আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিবেদক জাহিন সিংহ ও তৃতীয় মাত্রার প্রতিবেদক সোহেল রানাকে সংবাদ প্রকাশ না করতে হুমকি দেন গ্রেপ্তার ইউপি সদস্যের ভাই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক থানা সভাপতি সামিউল আলম শামীম ওরফে এসএ শামীম।
তবে পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাটির সংবাদ প্রকাশ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে দুই সাংবাদিকের বিকৃত ছবি তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হুমকি ও অপপ্রচার শুরু করেন শামীম ও তার অনুসারীরা। এর প্রতিবাদে ১৩ আগস্ট সকালে উপজেলা পরিষদে মানববন্ধন করেন সাংবাদিকরা। অপপ্রচার ও হুমকির ঘটনায় সেদিন রাতেই সাভার মডেল থানায় জিডি করেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক সোহেল রানা।
তবে ঘটনার পর দিন ১৪ আগস্ট দুপুরে সাভার উপজেলা পরিষদের ভিতরে প্রকাশ্যেই সাংবাদিক সোহেল রানার ওপর হামলা চালায় শামীমের লোকজন। গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশ সোহেলকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর ১৫ আগস্ট শামীমকে প্রধান আসামি করে ২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩০ জনের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন হামলার শিকার সাংবাদিকের মামা আশরাফুল ইসলাম।
হাসপাতালে ১০ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থাতেই সাংবাদিককে হত্যাচেষ্টার ঘটনা আড়াল করতে ১৭ আগস্ট হামলার শিকার সোহেল রানা ও তার সহকর্মী জাহিন সিংহ’র বিরুদ্ধে আদালতে একটি কাউন্টার মামলা করেন হত্যাচেষ্টা মামলায় প্রধান আসামি সামিউল আলম শামীম।
উল্লেখ্য, একসময় এলাকায় অনেকটা প্রকাশ্যেই মাদক ব্যবসা করলেও ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে চাঁদাবাজির টাকায় রাতারাতি বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনে যান শামীম। এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে গুলি চালাতে দেখা যায় শামীমকে। তার বিরুদ্ধে ছাত্র হত্যার ২৩টি মামলা ছাড়াও চুরি, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ আরও এক ডজন মামলা রয়েছে।
মন্তব্য করুন