শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। সেই সঙ্গে রাজশাহীতে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মশার উপদ্রব। দিনে-রাতে রাজশাহী নগরীতে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বাসিন্দারা। বিশেষ করে ইফতারি ও সেহরির সময় মানুষ মশার জ্বালায় নিদারুণ ভোগান্তিতে পড়ছেন। কয়েল, স্প্রে ও ইলেকট্রিক ব্যাট ছাড়াও মশারি টানিয়েও মশার অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছেন না তারা।
নগরবাসী বলছেন, জনপ্রতিনিধিরা না থাকার কারণে সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। আর সিটি করপোরেশন বলছে, এখন প্রজনন মৌসুম বলে মশার উৎপাত বেড়েছে। অন্য শহরের তুলনায় এখানে মশা কম।
রাজশাহী নগরীতে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, দিনের বেলায় খোলা জায়গায় বসে থাকলেও মশার ভনভন শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন মানুষ। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে মশার এ উপদ্রব বেড়ে যায় কয়েকগুণ। যাতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী, স্বজন, বৃদ্ধ ও শিশুরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও দিনের বেলায় মশার কামড়ে কাহিল হয়ে পড়ছেন।
রাজশাহী মহানগরীর তেরখাদিয়া এলাকার কলেজ শিক্ষক মহিবুল হক জানান, রাজশাহী নগরীতে মশার উপদ্রব মারাত্মকভাবে বেড়েছে, বলার মতো নয়। তাই নগরবাসীর ঘুম হারাম হয়ে গেছে। বহুতল ভবনের আট-দশ তলাতেও রেহাই পাচ্ছে না বাসিন্দারা। আর নিচের তলার অবস্থাটা দিনে-রাতে প্রায় সমান। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান, মসজিদ-মাদ্রাসাতেও মশার অবাধ বিচরণে জর্জরিত নগরজীবন।
রাজশাহীর হোসেনীগঞ্জ এলাকার এক মেসবাড়ির শিক্ষার্থী রিফাত হাসান বলেন, অগ্নিঝরা মার্চ শুরু হয়েছে। গরম শুরুর পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মশার উপদ্রব। রমজান মাসও শুরু হয়েছে। কিন্তু মশার যন্ত্রণায় শহরে টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে।
পাঠানপাড়া এলাকার একটি ছাত্রীনিবাসের বাসিন্দা অর্পিতা রায় বলেন, দিনের বেলায় মশারি দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না মশার আক্রমণ। দিনে-রাতের কোনোসময়ই রেহাই পাওয়া যায় না। শুধু মেস বা বাসাবাড়িতেই নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
রাজশাহী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আলমগীর সালেহী বলেন, ক্লাসেও মশার কামড় হজম করতে হচ্ছে।
রাজশাহী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নজিবুর রহমান জানান, ক্লাসে বরাবরই মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় মশার কামড়ে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা ক্লাস থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের রোগী ও স্বজনরাও। হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর নিচতলাতে রোগী ও স্বজনরা একবিন্দুও ঘুমাতে পারেন না।
রামেক হাসপাতালের ১৪ নং ওয়ার্ডে ভর্তি এক রোগীর স্বজন খানশামা বলেন, ‘দুই দিন থেকে রোগী ভর্তি করিয়েছি এখানে। কিন্তু মশার কারণে হাসপাতালে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে।
তবে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, ড্রেন পরিষ্কার করে স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে লার্ভিসাইড ওষুধ ছিটানো হচ্ছে মশার ডিম ধ্বংসের জন্য। আর ফগার মেশিনের ওষুধের মজুত খুবই অল্প। তা দিয়ে সাতদিনও কার্যক্রম চালানো যাবে না। তাই এটি বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ডে লার্ভিসাইড ওষুধ স্প্রে করে মশার ডিম ধ্বংস করা হচ্ছে। প্রতি সাত দিন পর পর একেকটি ড্রেনে ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে বলেও দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন ডলার বলেন, ‘মশা এখন বেড়েছে তা ঠিক। কারণ এখন এদের প্রজনন মৌসুম চলছে। তাছাড়া বাড়ির পাশের ঝোপঝাড় অনেকে পরিষ্কার রাখছেন না। ছাদবাগানের টবের পানি থেকেও বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে। এসব ব্যাপারে নগরবাসীকে একটু সচেতন থাকতে হবে। তাহলে মশার সংখ্যা কমবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের শহরে মশা তুলনামূলক কম। অন্য শহরে এখন আপনি দাঁড়াতেই পারবেন না। আমরা পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। মেয়র-কাউন্সিলর থাকলে তদারকিটা ভাল হয়। এখন তারা নেই। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সরকারি কর্মকর্তারা দায়িত্বে আছেন। তাদের আরও অনেক কাজ থাকে। তারপরও যতটা সম্ভব আমরা সব তদারকি করছি।’
তিনি আরও বলেন, এখন লার্ভিসাইড ওষুধ ও ফগার মেশিনের ওষুধের মজুত খুবই কম। ওষুধ কিনতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। রোববার দরপত্র দাখিলের শেষ দিন। সপ্তাহখানেকের মধ্যে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হবে। পরে ওষুধ এলে মশক নিধন কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।’
মন্তব্য করুন