শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে গাজীপুরের শ্রীপুরে এসকিউ গ্রুপের এসকিউ সেলসিয়াস লিমিটেড নামের একটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, নিটিং সেকশনের শ্রমিকরা অন্যায্যভাবে ১৩ দফা দাবি জানালে সেকশনটি রোববার (০২ মার্চ) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২ এর পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম বলেন, শনিবার (১ মার্চ) বিকালে ওই সেকশন বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবিগুলো হলো- দুপুরের মধ্যাহ্নবিরতি এক ঘণ্টা, যেসব নিটিং অপারেটর দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করছেন তাদের মধ্যে থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে ৮০ ভাগ শ্রমিককে সিনিয়র অপারেটর হিসেবে পদোন্নতি, রাতে খাবার পরিবেশন না করে নগদ টাকা, সপ্তাহে দুই দিন ছুটি, শতভাগ কোয়ালিটি ও প্রোডাকশন বোনাস এবং উইন্ডিং মেশিন ডাবল করতে হবে।
এ ছাড়া লোপ মেশিন, টেকনিক্যাল সমস্যা সমাধান, সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্ল্যানিং, টাইমিং ঠিক, কোয়ালিটি ইনসেনটিভ, মেন্ডিং মেন ইনসেনটিভ, উইন্ডিং ইনসেনটিভ, আধা বেলা ছুটি চলবে না এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মানবসম্পদ বিভাগের শাহরিয়াত হোসেন, জয়নাল আবেদীন, নিটিং সেকশনের অপারেশন ম্যানেজার মনিরুজ্জামান সুমনকে অপসারণ করতে হবে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে ১৩ দফা দাবিতে শ্রমিকরা সকাল থেকে সেকশনে শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি পালন করেন। পরে ওই ১৩ দফা দাবি তারা লিখিতভাবে কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানায়। ওই দিন বিকেল ৪টায় কারখানার নিটিং সেকশনে ছুটি ঘোষণা করা হয়। শনিবার (০১ মার্চ) তারা কারখানায় শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি পালন করেন। দুপুরের পর তাদের ওই দিনের জন্য ছুটি দিয়ে দেয়। পরে বিকালে কারখানা গেটে কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য নিটিং সেকশন বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দেয়।
শ্রমিকরা বলেন, আমাদের দাবি পূরণ এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত কাজে যোগদান করব না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি পালন করে যাব। কারখানার ম্যানেজমেন্টের কিছু কর্মকর্তা শ্রমিকদের নামে মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে আমাদের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। কাজ করে বেতন নিই, এখানে চুরি করতে আসিনি। আমাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমরা কাজ করছি। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে কারখানার পরিবেশ নষ্ট করছে।
এসকিউ সেলসিয়াস লিমিটেডের (ইউনিট-১) মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, সব কারখানায় কিছু দুষ্ট শ্রমিক থাকে। যারা ঈদের আগে এসব করে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য আন্দোলন করে থাকে। কারখানার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানার নিটিং সেকশন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২ এর পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম বলেন, অযৌক্তিক আন্দোলন ও কাজ বন্ধ করার কারণে মালিক পক্ষ বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ধারা ১৩ (১)-মতে রোববার থেকে কারখানার (নিটিং সেকশন) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ কাজ করছে।
মন্তব্য করুন