ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে তিতাস নদীর উপর নির্মিত অস্থায়ী বাঁশের সাঁকোই এখন ভরসা ১৭ গ্রামের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের। শত বছর ধরে এই স্থানে খেয়া নৌকায় পারাপার করতে গিয়ে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হতো এলাকাবাসীর।
তবে গত ৪-৫ বছর ধরে এ সাঁকো হওয়ায় মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। এখন ঝুঁকি নিয়ে হলেও দ্রুত নদী পারাপার করতে পারছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, তিতাস নদীর ওপর একটি স্থায়ী সেতু নির্মিত হলে বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগর উপজেলার প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে। বিশেষ করে নবীনগর উপজেলার অন্তত ১৭ হাজার মানুষ কম সময়ে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে পারবে।
তাদের অভিযোগ, এ সাঁকো দিয়ে পার হতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও বয়স্কদের জন্য এটি খুবই বিপজ্জনক। ব্যবসায়ীরাও মালামাল আনা-নেওয়ায় বিপাকে পড়ছেন। সেতুর অভাবে এলাকায় দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছানোও কঠিন হয়ে পড়ে, যার ফলে জরুরি চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ফরদাবাদ ইউনিয়নের চরলোহনিয়া ওয়াইসেতু নিচ থেকে তিতাস নদীর একটি শাখা কলাকান্দি, পূর্বহাটি, ফরদাবাদ, পিঁপিড়িয়াকান্দা, দুবাচাইল, বাজে বিশারা, ভিটিবিশারা, গোকুলনগর গ্রাম দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ইমামনগর পর্যন্ত গিয়েছে। দরিকান্দির ইমামনগর এলাকার আনন্দবাজার সংলগ্ন তিতাস নদীটি পলি পড়ে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে।
শুষ্ক মৌসুমে এই এলাকার অনেক জায়গা দিয়ে মানুষ পায়ে হেঁটেই নদী পারাপার হতে পারে। ইমামনগর আনন্দবাজার থেকে পার্শ্ববর্তী নবীনগর উপজেলার ভিটিবিশারা গ্রামের মধ্যে শতবছর ধরে একটি খেয়া নৌকা চলাচল করত। গত কয়েক বছর ধরে এলাকাবাসী নিজেদের টাকায় একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে যাতায়াত করছে।
এই সাঁকো ব্যবহার করে নবীনগর উপজেলার রতনপুর ও শ্রীকাইল ইউনিয়নের ভিটিবিশারা, বাজেবিশারা, শাগদা, শ্রীকাইল, পেন্নাই, চন্দ্রনাইল, দুবাচাইল, রতনপুর, সাহাপুর, সাতমোড়া, মোল্লা, ভাউচাইল গ্রামের লোকজন বাঞ্ছারামপুরের কড়িকান্দি ফেরি পার হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে।
অন্যদিকে বাঞ্ছামপুর উপজেলার ইমামনগর, দরিকান্দি, গোকুলনগর, খাল্লা, ফরদাবাদ গ্রামের লোকজন পার্শ্ববর্তী নবীনগর উপজেলাসহ কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে যাতায়াত করে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই পথে যাতায়াত করে।
সরেজমিনে সাঁকো এলাকায় দেখা যায়, ইমামনগর গ্রামের আনন্দবাজার থেকে তিতাস নদীর ওপর দিয়ে বাঁশের সাঁকোটি পার্শ্ববর্তী নবীনগর উপজেলার ভিটিবিশারা গ্রামের বাংলাবাজার পর্যন্ত গিয়েছে। দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০০ ফুটের মতো। এই সাঁকো ব্যবহার করে এই এলাকার মানুষ প্রতিদিন দুই বাজারে ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদর হয়ে ঢাকা, কুমিল্লা, মুরাদনগর, নবীনগরে যাতায়াত করে। বাঁশের পিলার দিয়ে ওপরে কাঠ দিয়ে এই সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। দুই উপজেলার কয়েক গ্রামের সচ্ছল ব্যক্তিদের টাকায় এই সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়েছে।
স্কুলশিক্ষার্থী শিউলি আক্তার জানান, এ সাঁকো দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় ভয়ে থাকি। এ জায়গায় পাকাসেতু নির্মাণে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মুসা মিয়া জানান, নদীতে পাকা সেতু না থাকার কারণে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এতে করে অনেকেই আমাদের এখান থেকে বাজার করতে আগ্রহী হন না। ফলে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
ভিটিভিশারা গ্রামের দেলোয়ার হোসেন জানান, আমাদের গ্রামের সঙ্গে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার এই অংশে যদি পাকা সেতু নির্মাণ করা হয় তবে অল্প সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করতে পারব। আমি জন্মের পর থেকেই এই অবস্থা দেখে আসছি।
দড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল করিম জানান, তিতাস নদীর এই জায়গাটি দিয়ে প্রতিদিন ২ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। বিশেষ করে নবীনগর উপজেলার মানুষ ঢাকায় যেতে এই রোডটি ব্যবহার করে, এতে করে তাদের দূরত্ব অনেক কমে যায়। এখানে পাকা সেতু নির্মাণ হলে নবীনগর উপজেলার মানুষ এটি ব্যবহার করতে পারবে। পাশাপাশি এলাকার মানুষ এই রুটটি ব্যবহার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম যেতে পারবে।
মন্তব্য করুন