শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় হামলাকারীর পক্ষ নিয়ে উল্টো বিবৃতি দিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে শহীদ মিনারে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে শ্রদ্ধা নিবেদনের ছবি ও ভিডিও নেওয়ার সময় দৈনিক কালবেলার উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের ওপর সবার সামনে হামলা করেন নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বশির উদ্দিন ও তার অনুসারীরা। এতে আহত হন সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। পরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাও নিয়েছেন।
ছবি : হাসপাতালে আহত আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ
এখন তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রায়ই নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া ঘটনার দশ দিন পার হলেও জেলা কিংবা কেন্দ্র থেকে ওই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি বিএনপি। এ বিষয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এ ঘটনায় অনেকেই তার প্রতি সমবেদনা জানালেও জেলা বিএনপি তাকে বিভিন্নভাবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করতে থাকে।
এ ঘটনায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এমএ মান্নান ও সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম সিরাজ এক যৌথ বিবৃতিতে আহত সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে ‘ছাত্রলীগ কর্মী’ ট্যাগ দিয়ে হামলাকারীদের পক্ষে অবস্থান নেয়। অবশ্য হামলার শিকার ভুক্তভোগী সাংবাদিক থানায় মামলা করেছেন।
ছবি : সিরাজুল ইসলাম সিরাজ
জেলা বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, মূলত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি দুটো গ্রুপে বিভক্ত হওয়ায় অপরাধীরা সুযোগ নিচ্ছে। গ্রুপের নেতারাও দল ভারী রাখতে স্থানীয় নেতাদের আশ্রয় দিচ্ছে। এতে করে বিএনপির বদনাম হচ্ছে।
বিবৃতির বিষয়ে আহত সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের ছবি ও ভিডিও নেওয়ার সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সবার সামনে আমার ওপর হামলা হয়েছে। ঘটনার পর স্থানীয় বিএনপির অনেকেই আমার প্রতি সহমর্মিতা ও হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ দেখি জেলা বিএনপি আমাকে ‘ছাত্রলীগ কর্মী’ বলে হামলাকারীর পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে। এ ঘটনায় আমি বিস্মিত এবং মানসিকভাবে আবারও আহত হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমার পরিবারের কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না, আমার কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ও নেই। আমি আশা করেছিলাম বিএনপির পক্ষ থেকে আমার ওপর ন্যক্কারজনক হামলার বিচার করা হবে, অথচ করা হলো উল্টোটা।
বিবৃতির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এমএ মান্নান বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, শহীদ মিনারে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিবৃতিতে আহত সাংবাদিককে ছাত্রলীগ বলা হয়েছে বলে মনে পড়ে না। তবে সাংবাদিক তো মামলা করেছেন।
এ ব্যাপারে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, আমি বিষয়টি জানতাম না। খোঁজ নিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুতই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন