লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার ৯৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। দীর্ঘদিন ধরে পদগুলো শূন্য থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। আর ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক কার্যক্রম।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ৯৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৪১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে নিচ্ছেন সহকারী শিক্ষকরা। অন্যদিকে এই বছর শেষের দিকে আরও দুই-তিন জন প্রধান শিক্ষক অবসরে চলে যাবেন। প্রধান শিক্ষকের পদগুলো ৬৫ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৩৫ ভাগ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের বিধান রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিচ্ছে না অধিদপ্তর। তাই প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণ করা যাচ্ছে না।
রামগতি উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক পদশূন্য থাকা বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে- চররমিজ ইউনিয়নের ১৮টির মধ্যে ১৩টি, চরগাজী ইউনিয়নের ১০টির মধ্যে পাঁচটি, বড়খেরী ইউনিয়নের আটটির মধ্যে ছয়টি, চরআলগী ইউনিয়নের ১৬টির মধ্যে আটটি, আলেকজান্ডার ইউনিয়নের আটটির মধ্যে একটি, চরবাদাম ইউনিয়নের আটটির মধ্যে একটি, রামগতি পৌরসভার ১৪টির মধ্যে দুইটি, চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের ১২টির মধ্যে তিনটি এবং চর আবদুল্যাহ ইউনিয়নের দুইটির মধ্যে দুইটি।
উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চর আবদুল্যাহ ইউনিয়নের দক্ষিণ চর আবদুল্যাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং চর সেভেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে নেই প্রধান শিক্ষক। অন্যদিকে সহকারী শিক্ষকেরও সংকট রয়েছে এ দুটি প্রতিষ্ঠানে। দুর্গম চরাঞ্চলের কারণে সেখানে শিক্ষকরা যেতে চান না বলে জানান চরের বাসিন্দারা।
উপজেলার কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এ কারণে এসব বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি বিদ্যালয় পরিচালনার কাজও ব্যাহত হচ্ছে।
মধ্য চর আফজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষক মো. আবু সায়েদ বলেন, ২০০৭ সাল থেকে এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এর মধ্যে ২০১৬ সালে এক বছরের জন্য প্রধান শিক্ষক এসেছিলেন। পরে তিনিও চলে যান। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৮ পদের মধ্যে চারজন কর্মরত আছেন। এখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩০০ জন। আমি ২০১৯ সালে যোগদানের পর থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমাকে প্রশাসনিক কাজে উপজেলা সদরে প্রায় দিনই দৌড়াতে হয়। ফলে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না।
পূর্ব চরমেহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাফায়েত উল্যাহ বলেন, গত চার বছর ধরে আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। বিভিন্ন সময়ে আমাকে দাপ্তরিক কাজে উপজেলা সদরে যেতে হয়। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে ক্লাস্টার ট্রেনিংসহ বিভিন্ন মিটিংয়েও যেতে হয়। তখন আমার পাঠদান করানো সম্ভব হয়ে ওঠে না।
রামগতি ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু ইউছুফ বলেন, শূন্যপদগুলো পূরণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার জানানো হয়েছে। শিক্ষকরা পদোন্নতি পেলে দ্রুত পদায়ন করা হবে।
মন্তব্য করুন