বিস্তীর্ণ মাঠের মাঝখানে একটি সেতু। যার নেই কোনো সংযোগ সড়ক। সেতুর দুপাশেই মাঠের পর মাঠ শুধু আবাদি জমি। এ ছাড়া ২-৩ কিলোমিটারের মধ্যে নেই কোনো গ্রাম।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের নন্দুয়ার ইউনিয়নে ১৮ লাখ টাকায় সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল মাঠের ফসল পরিবহনের জন্য। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় কোনো কাজেই লাগছে না সেতুটি। এতে কৃষকের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।
৫৫ হাজার বিঘার আবাদি জমির মধ্য দিয়ে গরুর গাড়ি, পাওয়ার টিলার, লরি, পিকআপ ভ্যানের যাতায়াতের কোনো পথ নেই। ফলে ফসল কৃষককেই বহন করতে হয়। বর্ষাকালে আরও বিপাকে পড়েন তারা। বিলের পানি সাঁতরে ফসল ঘরে তুলতে হয়।
কৃষক সহিদুর ইসলাম বলেন, এখন জমিতে অনেক ভালো ফলন হয়। কিন্তু ফসল ঘরে তোলার সময় দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় আমাদের। অনেক দূর থেকে ফসল মাথায় করে বয়ে আনতে হয়। এ সময় শ্রমিক পাওয়া যায় না। সময়মতো ফসল কাটা সম্ভব না, হলে ফসল নষ্ট হয়। এ অবস্থায় সেতুর দুপাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হলে আমাদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হতো।
এদিকে রাণীশংকৈল প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চাষাবাদ সহজ করতে গোরকই লোলতই বিলে ২০১৯-২০ অর্থবছর ক্যানেল খনন করে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ। এতে বিলের পানি ব্যবহার করে আমন ও বোরো ধানসহ সরিষা চাষ করতে পারছেন কৃষকরা।
কিন্তু ক্যানেলের ওপরে অব্যবহৃত রাস্তা পাকা না হওয়ায় মাটি পুনরায় ক্যানেলে পড়ছে। এতে ক্যানেলটি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্যানেলটি বন্ধ হয়ে গেলে পুনরায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে চাষাবাদ ব্যাহত হতে পারে।
জানা গেছে, লোলতই বিলে ক্যানেলের অব্যবহৃত রাস্তা পাকাকরণের বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিকভাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বিএডিসি, এলজিইডি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ১২ দপ্তরে রিপ্রেজেন্টেশন আকারের ফাইল পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, ভন্ডগ্রাম থেকে জওগাঁও বিলে আগে হাঁটু সমান পানি জমে থাকায় বছরে একবার ফসল ফলানো সম্ভব হতো। উৎপাদন বাড়াতে বৃ বিএডিসি লোলতোই খাল খনন করা হয়েছে। ফলে এখন ২ হাজার হেক্টর জমিতে ৩টি ফসল আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে; কিন্তু বিস্তীর্ণ এই ফসলের মাঠের আশপাশে যাতায়াতের কোনো রাস্তা না থাকায় সময়মতো ফসল ঘরে তুলতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় প্রায় ৩ হাজার কৃষককে। তাই পানি নিষ্কাশন ও বিভিন্ন আবাদি ফসল বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হলে কৃষকের দুর্দশা লাঘব হবে।
মন্তব্য করুন