নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আগামীতে বগুড়ার শিবগঞ্জের মাটিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) শিবগঞ্জ উপজেলার আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান, শিবগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুজ্জামান শাহীন, জামায়াতের সাবেক এমপি মাওলানা শাহাদাতুজ্জামানসহ সরকারি কর্মকর্তারা এবং ইউপি চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন। পরে মীর শাহে আলমের নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মী ও ইউপি চেয়ারম্যানরা সভা বর্জন করেন।
সভায় বলা হয়, উপজেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি রনি মিয়ার বাড়িতে নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীরা হাতবোমা নিক্ষেপ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। কিন্তু ইউএনও ও ওসি সেই বাড়ি পরিদর্শন করেননি। এ ছাড়া অপরাধীদের গ্রেপ্তার না করায় সভা বর্জন করছেন তারা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত মান্নাকে শিবগঞ্জের মাটিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় যুবদল নেতা রনি মিয়ার বাহাগুলপুর গ্রামের বাড়িতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। এ ঘটনায় বিএনপি নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীকে দায়ী করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে অন্তত ৪ থেকে ৫টি মোটরসাইকেলে দুর্বৃত্তরা রনির বাড়ির সামনে নেমে হাতবোমা, পেট্রোল বোমা ও ককটেল বিস্ফোরণ করে।
আহত যুবদল নেতা রনি বলেন, যুবলীগের নেতা বর্তমানে নাগরিক ঐক্যের নামধারী অমিত হাসান, বিদ্যুৎ, এনামুল হক সরকার, পিয়াল, সাগর ও খোকনের নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জন দুর্বৃত্ত বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আমাকে হকিস্টিক দিয়ে মারতে থাকে। এ সময় আমার মাথায় আঘাত করে। মাথার আঘাত ঠেকাতে গিয়ে আমার বাঁ হাত ভেঙে যায়।
হামলার পরপরই বিক্ষুব্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরা মোকামতলা-জয়পুরহাট সড়কের আমতলী বন্দরে ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করেন। পরবর্তী সময়ে শিবগঞ্জ সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পুলিশ সুপার নাজরান রউফ ঘটনাস্থলে গিয়ে অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ প্রত্যাহার করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নাগরিক ঐক্যের বগুড়া জেলা সমন্বয়ক প্রভাষক সাইদুর রহমান সাগর বলেন, বিএনপি বোমা হামলার নাটক সাজিয়ে আমাদের নেতাকর্মীর ওপর দোষ চাপাচ্ছে। আহত শহীদুল ইসলামের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে নিয়ে আমরা দিনভর শজিমেক হাসপাতালে ব্যস্ত ছিলাম। এ সময় বিএনপি নাটক সাজিয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের নিয়ে নাগরিক ঐক্য নামধারী নেতাকর্মীরা এ হামলায় জড়িত। বিএনপির ঘাঁটি শিবগঞ্জে আওয়ামী লীগের দোসরদের ঠাঁই হবে না।
ওসি শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, ঘটনাস্থল পুলিশ পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাগরিক ঐক্যের পক্ষে কাজ করা সম্পর্কে ইউএনও জিয়াউর রহমান বলেন, মঙ্গলবার রাজশাহীতে মিটিংয়ে ছিলাম। শিবগঞ্জে পৌঁছেছি রাতে। পরদিন সকালে বিভাগীয় কমিশনার শিবগঞ্জে এসেছেন। সময়ের কারণে যুবদল নেতার বাড়িতে যাওয়া হয়নি।
এদিকে মাহমুদুর রহমান মান্নার ভাইসহ নাগরিক ঐক্যের ৯ নেতার নামে গতকাল বুধবার মামলা করা হয়েছে। বগুড়ার শিবগঞ্জে যুবদল নেতা রনি মিয়ার বাড়িতে বোমা হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে শিবগঞ্জ থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন উপজেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি রনি মিয়া। শিবগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুজ্জামান শাহীন মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় প্রধান আসামি নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার ছোট ভাই পিয়াল আহমেদ। এ বিষয়ে শিবগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, যুবদল নেতার বাড়িতে হামলার ঘটনায় ৯ জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।
মন্তব্য করুন