কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমারখালী উপজেলা শাখার সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান আলীর বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় জামায়াত ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কুমারখালী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এলংগীপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
তবে বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে সমন্বয়কের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় জামায়াত ও বিএনপির নেতারা। উল্টো সমন্বয়ক আলী ও তার বাবা আসাদুজ্জামান খান পাখির বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি এবং পুলিশি সহায়তায় মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ তোলেন তারা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে এক দল সন্ত্রাসী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা শাখার সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান আলীর এলংগীপাড়া এলাকার বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে চালায় তাণ্ডব। পরে কুমারখালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।
তবে এ হামলার বিষয়ে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমারখালী উপজেলা শাখার সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান আলী।
তিনি জানান, কুমারখালী উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আফজাল হোসেন ও কুমারখালী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জাকারিয়া মিলনের প্রকাশ্য ইন্ধনে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় প্রশাসনও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন তিনি।
আর সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান আলীর বাবা আসাদুজ্জামান পাখির অভিযোগ, উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আফজাল হোসাইন, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব লুৎফর রহমান, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মনোয়ার হোসেন, যুবদলের আহ্বায়ক জাকারিয়া আনছার মিলন, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খান আতিকুর রহমান সবুজ গংরা ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসরদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে চাঁদাবাজি-লুটপাট করছেন। তারই প্রতিবাদ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
তার দাবি, পুলিশের উপস্থিতিতে ভাঙচুর লুটপাট করলেও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো তাদের সহযোগীতা করেছেন।
এদিকে সমন্বক পরিচয়ে বাপ-বেটার চাঁদাবাজির প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেলে কুমারখালীতে সংবাদ সম্মেলন করেন উপজেলা বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
পৌরসভার এলংগী এলাকায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা জামায়াতের আমির আফতাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আফজাল হোসাইন, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব লুৎফর রহমান, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মনোয়ার হোসেন, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জাকারিয়া আনছার মিলন, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খান আতিকুর রহমান সবুজ প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আফজাল হোসাইন বলেন, গত ৩ আগস্ট পর্যন্ত আসাদুজ্জামান আলী পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ৫ আগস্টের পর সমন্বয়ক সেজে আলী ও তার বাবা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নিয়ে বাহিনী গঠন করে বালুরঘাট দখল, সড়কের কাজ বন্ধ করে দেওয়া, পুলিশ দিয়ে নিরীহ মানুষ ধরিয়ে মামলা বাণিজ্য ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের জিম্মি করে ত্রাস সৃষ্টি করে চাঁদাবাজি করেছেন।
তিনি বলেন, আলীর বাবা পাখির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদক ও অস্ত্রসহ একাধিক মামলা রয়েছে। দ্রুত সমন্বয়কের পদ থেকে আলীকে বহিস্কার এবং চাঁদাবাজ পাখিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। একই সঙ্গে সমন্বয়ক আলীর বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাটের বিষয়টিও অস্বীকার করেন সংবাদ সম্মেলনে।
অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে আনা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন সমন্বয়ক আলী। তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এ বিষয়ে কুমারখালী থানার ওসি সোলায়মান শেখ জানান, সমন্বয়ক আলীর বাড়িতে জনতা ভাঙচুর করেছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তবে সমন্বয়ক আলীর বাবা পাখির বিরুদ্ধে কুমারখালী, ঢাকাসহ বিভিন্ন থানায় ১২টি মামলা রয়েছে। কুমারখালী দায়ের করা মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন।
মন্তব্য করুন