ফেনীর সোনাগাজীতে প্রবাসী বন্ধুর স্ত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি হারুন উর রশিদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হারুনুর রশিদ মিয়াজী (৩০) উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের চরসাহাভিকারী গ্রামের মিয়াজী বাড়ির রফিকুল ইসলামের ছেলে।
জানা গেছে, প্রবাসী নুর নবী সাগরের সঙ্গে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে তার খালাতো বোনের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর সাগর ইরাক চলে যান। স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকায় মা-বাবার চিকিৎসা ও তার পরিবারের জন্য তার বন্ধু হারুনুর রশিদ মিয়াজীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রতিমাসে টাকা পাঠাতেন ইরাক প্রবাসী সাগর। হারুন সেই টাকা নিয়ে সময়-অসময়ে সাগরের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। সাগরের বাড়ির সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলেন হারুন।
কিছুদিন আগে সাগরের স্ত্রী তার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে তার অজান্তেই তার অর্ধনগ্ন ছবি-ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল শুরু করেন হারুন। ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রথম ধাপে ৫০ হাজার টাকা নেয় এবং ভিডিও দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। হারুনকে ভিডিও এডিটিংসহ নানাভাবে সহযোগিতা করেন মোবাইল মেকানিক জাকির হোসেন শুভ। আপত্তিকর ভিডিও দেখিয়ে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রবাসী সাগরের জমি কেনার জন্য পাঠানো ৩০ লাখ টাকা এবং ২০ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেয় হারুন ও শুভ। কিছুদিন পর হারুনুর রশিদ মিয়াজী বিদেশে যাবেন বলে তার কাছে থাকা ভিডিওগুলো তার বন্ধু জাকির হোসেন শুভকে দেয়। এরপর শুভ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ভুক্তভোগীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন।
ভুক্তভোগীর স্বামী নুর নবী সাগর বলেন, বন্ধু হয়ে আমার প্রবাসে অর্জিত সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করে তারা আমার স্ত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করে আমার ছোট মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ছয় লাখ টাকা ঋণ নেয়, বাড়ির খালেদা আক্তার নামে একজন থেকে সুদের ওপর তিন লাখ টাকা নেয়। এভাবে হারুন ও শুভ আমার ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। আমাকে সর্বস্বান্ত করে দিয়ে পথের ভিখারি বানিয়েছে।
পুলিশ জানায়, সম্প্রতি আসামিরা পুনরায় গৃহবধূকে ব্ল্যাকমেইল করে আরও ১৫ লাখ টাকা দাবি করলে গৃহবধূ ওই টাকা দিতে না পেরে বাড়ি ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে গৃহবধূ তিনজনকে আসামি করে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন। এ ঘটনায় গৃহবধূর দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি হারুনুর রশিদ প্রকাশ হারুন মিয়াজীকে গ্রেপ্তার করেছে। এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি মামলার ২ নম্বর আসামি জাকির হোসেন শুভকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ আরও জানায়, মামলার পর থেকে হারুন পলাতক ছিলেন। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিমান বন্দর দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় ইমিগ্রেশন পুলিশের সহায়তায় চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোনাগাজী মডেল থানার এসআই (নিরস্ত্র) নিদুল চন্দ্র কপালীর নেতৃত্বে একটি দল তাকে গ্রেপ্তা করে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ও একটি মেমোরি কার্ড উদ্ধার করে। এতে গৃহবধূর আপত্তিকর ছবি এবং ভিডিও রয়েছে।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো. বায়েজিদ আকন কালবেলাকে বলেন, ভুক্তভোগী গৃহবধূর পর্নোগ্রাফি আইনে দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আসামি হারুনুর রশিদ মিয়াজীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন