নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুরবাসী মাতল লালন স্মরণোৎসবে। ফকির লালন সাঁইজির ১৩৪তম তিরোধান বর্ষ উপলক্ষে ‘মধুপুর লালন সংঘের’ আয়োজনে রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় এ উৎসব শুরু হয় মধুপুর রানী ভবানী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে, চলে রাত ২টা পর্যন্ত।
লালন ভক্তদের পদচারণায় মুখর মাঠে দোকানিরাও সাজিয়ে বসেছিলেন রকমারি পণ্যের পসরা। সুসজ্জিত আলোকসজ্জায় চারদিক ঝলমল।
উৎসবের মঞ্চে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মধুপুর লালন সংঘের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন তরফদার। সংঘের উপদেষ্টা এস এম শহীদের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন, অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এমরানুল কবির, লালন স্মরণোৎসবের আহ্বায়ক সবুজ মিয়া, মধুপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মোতালেব হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন টাঙ্গাইলের সমন্বয়ক ও জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ফাতেমা রহমান বীথি।
শুরুতে অতিথিদের উত্তরীয় দিয়ে বরণ করে নেওয়ার পর মধুপুর লালন সংঘের প্রয়াত উপদেষ্টা এম এ রউফের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সংঘের উপদেষ্টা অলোক কুমার চৌধুরীর সঞ্চালনায় স্মরণোৎবে সংগীত পরিবেশন করেন কুষ্টিয়া থেকে আগত লালন শিল্পী শাহাবুল, বাউল রশীদ, গামছা নার্গিস, মুন মোনালিসা, কাজল রেখাসহ মধুপুর লালন সংঘের নিয়মিত শিল্পীরা। অল্প সময়েই আসর জমে যায় বাউলদের কণ্ঠে লালনের গানে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি স্থগিত হওয়া মধুপুর লালন স্মরণোৎসব ২৩ ফেব্রুয়ারি জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু অডিটোরিয়ামে সীমিত আসন সংখ্যার কারণে সেখানে উৎসব আয়োজন সম্ভব নয়। সেজন্য গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক টাঙ্গাইল বরাবর বাসস্ট্যান্ডে (স্থগিত হওয়ার আগে নির্ধারিত) অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রানী ভবানী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উৎসব আয়োজনের পরামর্শ দেন। এই পরামর্শ গ্রহণ করে মধুপুর লালন সংঘ। সে অনুযায়ী, গত রোববার মধুপুর রানী ভবানী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়।
মরমী কবি লালন সাঁইজির ১৩৪তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে মধুপুর লালন সংঘ গত ১২ ফেব্রুয়ারি লালন স্মরণোৎসব ২০২৫ আয়োজন করে। কিন্তু উপজেলায় হেফাজতে ইসলামের আপত্তির মুখে উৎসব স্থগিত ঘোষণা করা হয়। বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হলে উপজেলা প্রশাসন এবং মধুপুর বিএডিসি ক্যাম্পে স্থাপিত সেনা ক্যাম্প বিষয়টি উদ্যোগ নেয়। পরে দুপক্ষের উপস্থিতিতে সমঝোতার মাধ্যমে ২৩ ফেব্রুয়ারি উৎসবের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এতে মধুপুর হেফাজতে ইসলাম উৎসব আয়োজনে কোনো বাধা না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপরই মহাসমারোহে মধুপুরে পালিত হলো লালন স্মরণোৎসব।
মন্তব্য করুন