শিবচতুর্দশী তিথি উপলক্ষে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ ধামে তিন দিনের তীর্থযাত্রা শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার থেকে। এ তীর্থযাত্রা উপলক্ষে শুরু হবে ১৫ দিনের শিবচতুর্দশী মেলা। দোলপূর্ণিমার মধ্য দিয়ে এ মেলা শেষ হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সীতাকুণ্ড স্রাইন (তীর্থ) কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন দাশ। চন্দ্রনাথ ধাম, আদিনাথ ধাম ও কাঞ্চননাথ ধামের তীর্থ পরিচালনা করে সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটি।
প্রতি বছরই স্রাইন কমিটির প্রধান কার্যালয় মোহন্ত আস্তান বাড়িতে বৈদিক সম্মেলন ও ঋষি সমাবেশ করা হয়। বৈদিক সম্মেলনে ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনা করেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সাধু-সন্ন্যাসীরা। কিন্তু এবার বৈদিক সম্মেলন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কমিটির দায়িত্বশীলরা। তবে দূরদূরান্ত থেকে সম্মেলনে আসা যাত্রীদের জন্য থাকা ও প্রসাদের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, এবার যেখানে বৈদিক সম্মেলন হতো, সেখানে তীর্থযাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তীর্থ যাত্রীদের থাকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বৈদিক সম্মেলন বাদ দেওয়া হয়েছে।
ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাশ বলেন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি এ তীর্থের মূল তিথি শিবচতুর্দশী। এ দিনেই তীর্থযাত্রীরা শিবরাত্রীর ব্রত রেখে মূল তীর্থ করবেন। পরদিন অমাবস্যা তিথিতে মৃত পূর্বপুরুষের জন্য শ্রাদ্ধ করবেন তারা। এবার শিবচতুর্দশী মেলায় অন্তত ১০ লাখ ভক্ত সমাগমের আশা করা হচ্ছে। এজন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মেলার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নতুন করে সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। সড়ক সংস্কার, পর্যাপ্ত লাইটিং, সিসি ক্যামেরা সংযোজন, পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
শিবচতুর্দশী মেলাকে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মেলার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে তুলে ধরা হয়।
শিবচতুর্দশী মেলা উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক সভা হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় মেলার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে তুলে ধরা হয়। মো. কামরুজ্জামান বলেন, সুষ্ঠু-সুন্দরভাবে শিবচতুর্দশী মেলা আয়োজনের লক্ষ্যে সব দপ্তরে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। সভায় সীতাকুণ্ড থানার ওসি মজিবুর রহমান বলেন, শিবচতুর্দশী মেলা উপলক্ষে এবার ৬০০ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। মেলায় জনসমাগম গতবারের তুলনায় বেশি হবে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
শিবচতুর্দশী তিথির পূজা-পার্বণ: দূরাগত তীর্থযাত্রীরা পুণ্যলাভের আশায় চন্দ্রনাথ ধামে মঠ-মন্দির দর্শন ও পূজা করেন। শিব চতুর্দশী তিথিতে হিন্দু ধর্মালম্বীরা এখানে ব্যাসকুণ্ডে পুণ্যস্নানের পর ভৈরববাড়ি, শম্ভুনাথ বাড়ি, বীরুপাক্ষ ও চন্দ্রনাথ দর্শন করে দেবাদিদেব মহাদেবকে ডাবের জল ও দুধে স্নান করিয়ে মাথায় ফুল ও বেলপাতা দেন। পাশাপাশি অন্যান্য মঠ-মন্দির দর্শন করেন। তবে এ তিথিতে অনেকে ব্যাসকুণ্ডের পাড়ে পূর্বপুরুষদের আত্মার তৃপ্তির জন্য তর্পণ করেন।
মন্তব্য করুন