কুমিল্লার চান্দিনায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য বিগত সরকারের আমলে দেওয়া উপহারের বেশিরভাগ ঘরেই তালা ঝুলছে। সেখানে থাকছেন না বরাদ্দপ্রাপ্তরা। বরাদ্দ পাওয়ার পরও যারা এসব ঘরে থাকছেন না, তাদের বরাদ্দ বাতিল করে নতুনদের দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ উপজেলায় ৫টি ধাপে উপকারভোগীদের মাঝে ২১৬টি দৃষ্টিনন্দন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়; কিন্তু ঘর বরাদ্দ পেয়েও সেখানে থাকছেন না অনেকে। তাদের মধ্যে অনেকের অন্যত্র বাড়ি থাকায় অথবা শহরে বাসা ভাড়া করে থাকায় উপহারের ঘরে এখন তালা ঝুলছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই অর্ধশতাধিক তালা ঝুলানো ঘর দেখা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, অনেকেই রাজনৈতিক বিবেচনায় ঘরগুলো বরাদ্দ পেয়েছেন। আবার অনেকে জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে নগদ টাকার বিনিময়ে ঘর পেয়েছেন। তাই প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন অনেকেই ঘর পাননি। বেশিরভাগ সুবিধাভোগীকেই বরাদ্দ পাওয়া ঘরগুলো তালা দিয়ে অন্যত্র বসবাস করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ের অস্থায়ী স্টাফের বাসার বুয়া বরাদ্দ পেয়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর।
সরেজমিন উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের ভোমরকান্দি আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ৪০টি ঘরের মধ্যে ১৭, ২৪, ২৯, ৩০, ৩৬ ও ৪০ নম্বরসহ বেশিরভাগ ঘরেই তালা ঝুলছে। আবার যেসব ঘরে লোকজন রয়েছে তাদের বেশিরভাগই ভাড়াটিয়া। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বরাদ্দ পাওয়া উপকারভোগীরা ঘরগুলো তালা ঝুলিয়ে অন্যত্র বসবাস করছেন।
সরেজমিন আরও দেখা যায়, ঘরের বারান্দায় জমে আছে ময়লা আবর্জনা, আবার অনেকের ঘরের ভেতরে ময়লার স্তূপ জমেছে। এ ছাড়া ঘরে কেউ না থাকায় বারান্দায় পাশের বাসিন্দা খড়ের স্তূপ করে রেখেছেন। প্রতিটি ঘরে রয়েছে দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটি শৌচাগার। রয়েছে বিদ্যুৎ আর সুপেয় পানির জন্য গভীর নলকূপের ব্যবস্থাও। কিন্তু সেখানকার বেশিরভাগ ঘরেই ফাঁকা পড়ে আছে। কয়েকটি ঘরের দেয়ালে ধরেছে ফাটল, ফাটল ধরা এসব ঘর সংস্কারও করা হয়নি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা নাজমা আক্তার বলেন, এখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে অনেকে থাকেন না। তাদের অন্য জায়গায় বাড়ি আছে, তারা সেখানে থাকেন। আর এখানে দু-একজন ঢাকায় থাকেন এজন্য তাদের ঘরে তালা দেওয়া আছে। আর এখানে বেশিরভাগ মানুষ ঘরে থাকেন না। ঘরগুলো ফাঁকা পড়ে আছে দীর্ঘদিন।
ঘর বরাদ্দ পাওয়া দিনমজুর সফিক মিয়া বলেন, এখানে কাছাকাছি কোনো স্কুল না থাকায় গ্রামের এক স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করিয়েছি। তাই আসা যাওয়ার ঝামেলা এড়াতে এখানকার ঘরে তালা ঝুলিয়ে রেখেছি। একই কথা বলেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস করা অনেকেই।
এদিকে ঘর না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রেনু বেগম বলেন, প্রকৃত যাদের দরকার তারা ঘর পাননি। যারা প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগের লোকজন ধরেছেন, তারাই ঘর পেয়েছেন; কিন্তু তারা ঘর পেলেও সেখানে একদিনের জন্যও বসবাস করেননি। অন্যত্র বসবাস করছেন।
ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ের কেরানির বাসায় কাজ করা পরিজা বেগম। তিনি জানান, তৎকালীন তহশিলদার ও জয়নাল স্যারের সহায়তায় তিনি ঘর পেয়েছেন। মাসিক মজুরিভিত্তিক কাজ করেন বলে তিনি নিজেকে অসহায় ও ভূমিহীন দাবি করেন।
উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায় একই চিত্র। প্রকৃত ভুক্তভোগীরা ঘর বরাদ্দ না পেলেও পেয়েছেন তৎকালীন আওয়ামী লীগের লোকজন। তাদের বরাদ্দ বাতিল করে নতুনদের বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় প্রকৃত ভূমিহীন-গৃহহীনরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজিয়া হোসেন বলেন, ফাঁকা ঘরগুলো শনাক্তকরণে চেষ্টা চলছে। প্রক্রিয়া অনুযায়ী প্রকৃত অসহায়দের ঘর প্রদান করা হবে। কেউ অসাধু উপায়ে ঘর পেয়ে থাকলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার জানান, ঘরগুলো যখন দেওয়া হয়েছে তখন যারা গৃহহীন তাদের দিয়েছিলাম। এখন চান্দিনাসহ গোটা জেলাতে কিছু মানুষ ঘরগুলোতে থাকছে না। যেহেতু কবুলিয়ত দলিল হয়ে গেছে এটার একটা প্রক্রিয়া আছে। টানা তিন মাস কেউ না থাকলে আমরা বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দিচ্ছি। এর পরও কেউ না এলে ঘর বাতিল করা হবে। আগ্রহী যারা আছে তালিকা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মন্তব্য করুন