নাটোরের বাগাতিপাড়ায় পুলিশি বাধায় বন্ধ হয়ে গেল অর্ধশতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ যাত্রাপালা। প্রতি বছরের মতো এবারও গ্রামের মানুষের চাঁদা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করা চাল আর সংস্কৃতিপ্রেমীদের সহযোগিতায় যাত্রাপালার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। তবে সাজসজ্জা শেষে শিল্পীরা যখন অভিনয়ের অপেক্ষায় ঠিক তখনি পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়ে যায় সব আয়োজন।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের দোবিলা গ্রামে আয়োজিত যাত্রাপালায় পুলিশি বাধার এই ঘটনা ঘটে।
এদিকে প্রায় ৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এই যাত্রাপালা প্রথমবারের মতো এমন বাধার ঘটনায় আয়োজকরা যেমন হতাশ হয়েছেন, তেমনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতিকর্মী ও স্থানীয় দর্শকরা।
আয়োজক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দোবিলা গ্রামে আয়োজিত যাত্রাপালা কোনো ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়। বরং প্রায় ৫০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এবারও গ্রামের সংস্কৃতিপ্রেমী লোকজন উদ্যোগ নেন। যাত্রার ব্যয় মেটাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করা হয় চাল, ডাল ও অর্থ। গ্রামের প্রবীণ থেকে নবীন সবাই এই আয়োজনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে আয়োজন বন্ধ করতে বলে বাগাতিপাড়া থানা পুলিশ।
আয়োজক, সংস্কৃতিকর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি, গ্রামের নারী-পুরুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণে ঐতিহ্যবাহী এমন আয়োজনে বাধা গ্রামীণ সংস্কৃতির জন্য অশনিসংকেত।
যাত্রাপালা অনুষ্ঠানের পরিচালক আব্দুল আলীম (৭০) বলেন, আমি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি তখন থেকেই পেশাদার না হলেও যাত্রাপালার সঙ্গে জড়িত। তখন থেকেই আমাদের গ্রামের এই আয়োজন দেখে আসছি। এটা পুরোপুরি সুস্থ বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা। এখানে অশ্লীলতা বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটার কোনো সুযোগ নেই। এ যাবত কোনো দিন এরকম বাধা দেওয়া বা যাত্রা বন্ধ করার মতো ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন বলেন, গ্রামের সকলের অংশগ্রহণে আয়োজিত এই যাত্রাপালায় অশ্লীল বা বিশৃঙ্খল কোনো ঘটনার সুযোগ নেই। হঠাৎ অনুষ্ঠান বন্ধের খবরে ঘটনাস্থলে আসলে পুলিশ জানায়, যাত্রা বন্ধ করতে ওপর মহলের নির্দেশ আছে। অনুষ্ঠানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার সকল দায়ভার আমি নিতে চাইলেও তারা অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলে।
যাত্রাপালা অনুষ্ঠানে পুলিশি বাধার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী নাটোর জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল আহমেদ কালবেলাকে বলেন, যাত্রাপালা বাঙালি সংস্কৃতির নিজস্ব ঐতিহ্য। যখন সরকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চা কোনো বাধার মুখে পরবে না। এ রকম সময়ে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী একটি আয়োজনে অতি উৎসাহী হয়ে স্থানীয় প্রশাসনের বাধা দেওয়ার ঘটনা ন্যক্কারজনক। এ ধরনের সুস্থ ধারার বাঙালি সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে দ্রুত যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই সংস্কৃতিকর্মী।
বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, বাহির থেকে মেয়ে নিয়ে এসে যাত্রা হবে তাই নিষেধ করেছি। এটা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে কথা আসছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে তাই বন্ধ করেছি। তবে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আসলে আয়োজন করতে কোনো বাধা থাকবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার হা-মীম তাবাসসুম প্রভা জানান, যাত্রাপালা বন্ধের বিষয়ে তিনি অবগত নন।
মন্তব্য করুন