দীর্ঘ ১৬ বছর পর বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শেষ হয়েছে যশোর জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। এতে যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ও সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন নির্বাচিত হয়েছেন।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) যশোর টাউন হল ময়দানে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে কাউন্সিলরদের ভোটে তারা নির্বাচিত হন। এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন রবিউল ইসলাম, মনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু ও শহিদুল বারী রবু। শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে এ ফলাফল ঘোষণা করেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান।
ফলাফল ঘোষণার আগে আমান উল্লাহ আমান নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ফলাফলে কে নির্বাচিত হলো, কার ভোটে কে নির্বাচিত হলো সেটা দেখা যাবে না। একমাত্র বিএনপিই গণতান্ত্রিক পন্থায় বিশ্বাস করে বলেই আজ নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করল। কার ভোটে কে নির্বাচিত হলো, কে কাকে ভোট দিল সেটা ভুলে যেতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে- সবাই জিয়ার সৈনিক। সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে দলের জন্য কাজ করতে হবে। বিগত আন্দোলনে যেভাবে সবাই এক ছিলাম।
ফলাফল ঘোষণাকালে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু ও জেলা বিএনপির সদ্যবিদায়ী আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম।
দীর্ঘ ১৬ বছর পর শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় কেন্দ্রীয় ইদগাহ ময়দানে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন শেষে বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের পর দুপুর ২টা থেকে শহরের টাউন হল ময়দানের আলমগীর সিদ্দিকী হলে কাউন্সিলরদের গোপন ভোটের আয়োজন করে কেন্দ্রীয় ঘোষিত নির্বাচন কমিশন। সেখানে আট উপজেলার ১৬টি ইউনিটে ১ হাজার ৬১৬ ভোটারের মধ্যে ১ হাজার ৪৮৫ জন ভোট দেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের ১০ বছর পর ২০১৯ সালের ২০ এপ্রিল যশোর জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী অধ্যাপক নার্গিস বেগম আহ্বায়ক এবং অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু সদস্যসচিব হন। ওই কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বলা হলেও পেরিয়ে যায় ৬ বছর।
শীর্ষ নেতারা বলছেন, এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করার কারণে আন্দোলন ও কমিটি গঠন ঝিমিয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। যশোরে বিএনপির রাজনীতিতে এই সম্মেলন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে দলকে সুসংগঠিত করে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
মন্তব্য করুন