বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, অতীতে সোনার বাংলা কায়েম করতে গিয়ে শ্মশান বাংলা কায়েম করা হয়েছে। কোরআনই একমাত্র সোনার বাংলার গ্যারান্টি দিতে পারে। এখন হবে কোরআনের বাংলাদেশ। যারা কোরআনকে সহ্য করতে চান না, তাদের আমরা বলে দিতে চাই এ দেশের আপামর জনতা কোরআন বুকে নিয়ে বাঁচতে চায়। কোরআনকে আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশের যত ইসলামি দল আছে সময়ের পরিক্রমায় তাকিয়ে দেখুন, বিশেষ করে ৫ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত এরা কোথাও কোনো চাঁদাবাজি করছে এমনটি দেখাতে পারবেন না। তার একমাত্র কারণ, তারা কোরআনকে সম্মান করেন এবং বুকে ধারণ করেন। তারা একমাত্র আল্লাহকে ভয় করেন। যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে তারা মানুষের ওপর জুলুম করতে পারেন না।
তিনি বলেন, দুনিয়ার এমন কোনো রাষ্ট্র নেই, যেখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ নেই। বাংলাদেশেও আছে। কত পার্সেন্ট আছে সেটা বলতে চাই না। কারণ এটাও একটা বৈষম্য। আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি, এ দেশে যারাই জন্মগ্রহণ করবে তারাই এ দেশের গর্বিত নাগরিক। ধর্ম তার নিজস্ব ব্যাপার। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে তার নাগরিক অধিকার তার হাতে তুলে দিতে হবে। আমাদের বিদ্যমান সংবিধানে অধিকারের কোনো তারতম্য নেই।
তিনি আরও বলেন, কেউ কেউ অপপ্রচার করছে জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে নারীদের বন্দি করে রাখবে। আমি বলি, আমার মা যতদিন বেঁচে ছিলেন আমি তাকে বন্দি রাখিনি। আমার স্ত্রী একজন চিকিৎসক, তিনি পার্লামেন্টের সদস্যও ছিলেন। আমার দুই মেয়েও চিকিৎসক। তারাও তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে জাতিকে সেবা দিচ্ছে। কই আমি তো বন্দি করে রাখলাম না তাদের।
জামায়াতের আমির বলেন, এখন আমরা যারা বলি কোরআন এক জিনিস আর রাজনীতি আরেক জিনিস। তা ঠিক নয়। দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র ছিল মদিনাকেন্দ্রিক রাষ্ট্র। সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি একটা আদর্শের ভিত্তিতে শাসন করতেন। সেই আদর্শটা হলো আল কোরআনের আদর্শ। ইসলামের আদর্শ। আল্লহর দেওয়া আদর্শ।
আমিরে জামায়াত বলেন, এই ১৫ বছরে বাংলাদেশে অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে। দফায় দফায় রক্তের বন্যা বয়েছে। এই ৫৪ বছরে অনেক দলের শাসন আপনারা দেখেছেন। অনেক আদর্শের কথা আপনারা শুনেছেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রিয় আদর্শ ইসলামের শাসনটাই দেশবাসীর দেখার সুযোগ হয়নি।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ ২০২৪ এর ৫ আগস্ট পর্যন্ত যে দলের মানুষকে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে তার নাম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জেলে নিয়ে এক এক করে দশজনকে খুন করেছে। আর একজনকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তিনি হচ্ছেন আমাদের ভাই এটিএম আজহারুল ইসলাম। আফসোসের বিষয় ছয়টি মাস হয়ে গেল, ফ্যাসিবাদ চলে গেছে। কিন্তু ফ্যাসিবাদের বোঝা এখনো আমার ভাইয়ের ঘাড়ে বসে আছে। এক এক করে জাতীয় নেতারা সবাই বেরিয়ে আসলেন। অথচ এটিএম আজহারুল এখনো অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কারাগারের ভেতরে। তাই আমি মনের কষ্টে বলেছি আজহারুল ভাইকে ভেতরে রেখে আমি আর বাইরে থাকতে চাই না। আমি সরকারকে অনুরোধ করে বলেছি, আগামী ২৫ তারিখ আমি নিজেকে স্বেচ্ছায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে বলব, আমাকে গ্রেপ্তার করুন এবং কারাগারে পাঠান। যেদিন আজহারুল ইসলামের মুক্তি হবে তার পরেরদিন আমাকে মুক্তি দিয়েন। ১৩টি বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ধুঁকে ধুঁকে তিনি জীবনের সঙ্গে লড়াই করছেন।
জেলা জামায়াতের আমির মাস্টার রুহুল আমিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও মো. ফারুক হোসাইন নুরনবীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আতিকুর রহমান, ঢাকাস্থ লক্ষ্মীপুর ফোরামের সভাপতি ডা. আনোয়ারুল আযিম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন