রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ বলেছেন, আমরা যে অঞ্চলে থাকি সেখানকার ভাষাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে ব্যবহার না করলে ক্রমান্বয়ে তা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা প্রশাসন আয়োজিত ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জাতীয় জীবনে একুশের চেতনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বসবাস করছে যাদের নিজস্ব ভাষা আছে। তাদের ভাষায় তারা কথা বলতে পারে কিন্তু লিখতে পারে না কারণ তাদের বর্ণমালা নেই। তাদের প্রবীণরা অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছে ফলে পুরোনো ভাষায় কেউ আর কথা বলছে না। নতুন ছেলে-মেয়েরা নতুন ভাষায় কথা বলছে।
তিনি বলেন, ৫২-তে ভাষা আন্দোলনের দাবি ছিল মূলত বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার। এর আগে জিন্নাহ এসে যখন বললেন, উর্দু হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা- তখন ছাত্ররা তা মেনে নিল না কারণ তিনি শুধু উর্দু ভাষার কথা বলেছিলেন।
প্রধান অতিথি আরও বলেন, ৫৪-এর নির্বাচনী ইশতেহারে প্রথম দাবি ছিল বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার। এর ফলেই ৫৬-তে পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলাও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়। বিভাগীয় কমিশনার এ সময় ভাষাশহীদসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ এবং ২৪-এর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান এবং পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম।
আলোচনা সভা শেষে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শিশু একাডেমি আয়োজিত চিত্রাঙ্কন ও কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পুরস্কার প্রদান শেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি দিবসের শুরুতে রাত ১২টা ১ মিনিটে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার এবং পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানান।
পরে বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি দপ্তর ও সংস্থা, বিভিন্ন রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষাশহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
এদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোয় অর্ধনমিতভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
মন্তব্য করুন