টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র সংস্কারের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে লক্ষিন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোরশেদা আক্তারের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবক এবং এলাকাবাসীর পক্ষে ১৯ জন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ রাফিউল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগপত্র দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগপত্র এবং বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লক্ষিন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের একটি ভোটকেন্দ্র। একতরফা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থ বিভাগ থেকে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনার জন্য বিদ্যালয়টিতে দুই লাখ টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষক মোরশেদা আক্তার সেই অর্থ ঘর নির্মাণে ব্যয় না করে আত্মসাৎ করেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ে একটি সমাপণীকেন্দ্র ঘর নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে এলাকাবাসী অনুদান ও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে সে ঘরটি নির্মাণ করে দেয়। ভোটকেন্দ্র স্থাপনের জন্য বিদ্যালয়ে দুই লাখ টাকার বরাদ্দ এলে প্রধান শিক্ষক মোরশেদা আক্তার সেই টাকা ভোটকেন্দ্র নির্মাণ কাজে ব্যয় না করে এলাকাবাসীর অনুদানে নির্মিত ঘরটিকেই ভোটকেন্দ্র নির্মাণ হিসাবে দেখান। পরে সেই বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করেন। এমনকি ঐ ভবনের পুরোনো টিনগুলো অন্যত্র সরিয়ে বিক্রি করে টাকাও আত্মসাৎ করেন বলে লিখিত অভিযোগে জানান এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দা নাসির উদ্দিন বলেন, লক্ষিন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা চলে। ২০১৮ সালে যোগদানের পর থেকে প্রধান শিক্ষক এককবলে স্বেচ্ছাচারীভাবে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করেন। এ বিষয়ে শিক্ষা অফিসারের কাছে এলাকাবাসী একাধিক লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।
লক্ষিন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক মোরশেদা আক্তার ভোটকেন্দ্র নির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত দুই লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি স্থানীয় জনগণের অনুদান দেওয়া টিনগুলোও নিয়ে নিয়েছেন।
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক মো. শাহজাহান সিরাজ এবং জেসমিন আক্তার বলেন, ভোটকেন্দ্র সংস্কারের জন্য বরাদ্দ আসা দুই লাখ টাকা প্রধান শিক্ষক মোরশেদা আক্তার কোথায়, কীভাবে ব্যয় করেছেন সে বিষয়ে আমরা বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কিছুই জানি না। বিদ্যালয়ে সরকারি যেসব বরাদ্দ আসে সেগুলো তিনি সঠিকভাবে ব্যয় করেন না। জানতে চাইলে তিনি আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও অসদাচরণ করেন। এ ছাড়াও তিনি প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার নামেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন।
লিখিত অভিযোগের বিষয়ে লক্ষিন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোরশেদা আক্তারের নিকট জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শারমিন ইসলাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে অভিযোগ তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।
মন্তব্য করুন