হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে গাইবান্ধার ওড়াও জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ‘কুরুখ’। এর কারণ হিসেবে নিজস্ব বর্ণমালায় ভাষাচর্চার অভাবকে দায়ী করছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ। এ জন্য আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর দাবি তাদের।
জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্র জাতিসত্তার একটি বড় অংশ ওড়াও সম্প্রদায়। গাইবান্ধা সাদুল্লাপুরে তরফকামালপুর গ্রামে পাঁচশ বছর ধরে বসবাস করে আসছে ২৫টি ওড়াও পরিবার। হাট-বাজার, স্কুল কলেজ ও কর্মক্ষেত্রে বাংলা ভাষায় কথা বললেও নিজেদের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান হয় ‘কুরুখ’ ভাষায়। সেই ভাষাতেই তাদের রয়েছে গান, কবিতা। তবে এই ভাষাটি তাদের এখন হারিয়ে যাওয়ার হুমকিতে। নতুন প্রজন্ম স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়তে গিয়ে প্রায় ভুলতে বসেছেন নিজেদের ভাষা। ওড়াওরা বলছেন, ‘কুরুখ’ ভাষার বর্ণমালা না থাকায় চর্চা হয় না সেটা। ‘কুরুখ’ ভাষা রক্ষায় আলাদা প্রতিষ্ঠানের দাবি ওড়াও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের।
ওড়াও সম্প্রদায়ের সুনীল নামের এক যুবক দৈনিক কালবেলাকে বলেন, ছোটবেলায় মায়ের ভাষা তো শেখা আছে তবে এখন তেমন বলতে পারি না। কারণ বেশিরভাগ সময় বাঙালিদের সঙ্গে চলাফেরা করায় তাদের ভাষা সবসময় বলি এ জন্য এখন ভুলে গেছি প্রায় নিজ ভাষা। সরকারের কাছে ভাষাটি রক্ষার জন্য আমাদের ভাষার একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নতুনভাবে আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হোক। এটি দেওয়া হলে আমাদের নতুন প্রজন্মরা চর্চা করতে পারবে তাহলে আমার মতো আর কেউ নিজের মায়ের ভাষা ভুলবে না।
ওড়াও জাতিগোষ্ঠীর ষষ্ঠ শ্রেণির চৈতী নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, স্কুলে আমাদের ভাষার কোনো বই না থাকায় ঠিকভাবে এই ভাষা আমরা বলতে পারি না। মা বাবার মুখে যতটুকু শিখেছি ততটুকুই বলতে পারি।
ওড়াও সম্প্রদায়ের কৃষ্ণ কালবেলাকে বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা বাংলা ভাষায় সব সময় কথা বলে। সঠিকভাবে তাদের নিজের ভাষায় কথা বলতে পারে না। আমরা মারা গেলে আমাদের ভাষাও হারিয়ে যাবে কারণ এই ভাষার চর্চা নেই। দ্রুত যদি পাঠ্যপুস্তক ও এই ভাষার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখানে তৈরি করা হতো তাহলে আমাদের ভাষা রক্ষা পেত।
এদিকে গাইবান্ধা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. খলিলুর রহমান কালবেলাকে বলেন, নিজস্ব ভাষা বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে নষ্ট হচ্ছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জাতিগত বৈচিত্র্য। সুতরাং এই ভাষা রক্ষায় পাঠ্যপুস্তকের ব্যবস্থা বা আলাদা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় হবে সরকারের দায়িত্ব। তাহলে রক্ষা করা সম্ভব হবে ওড়াও জাতির গোষ্ঠীর ভাষা।
বর্তমানে দেশে সরকারিভাবে স্বীকৃত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী রয়েছে ৫০টি। এদের মধ্য প্রায় প্রচলিত আছে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা।
মন্তব্য করুন