ছোট ছোট বস্তায় ভরা হচ্ছে আলু। সেগুলো আবার ওজন দিয়ে প্যাকেজিং করে ট্রাকে তোলা হচ্ছে মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রংপুরের পীরগাছার পারুল ইউনিয়নের বেলতলীতে সড়কের পাশে দেখা মেলে এই কর্মযজ্ঞের।
এ সময় কথা হয় অভিরাম গ্রামের কৃষক ফসিউল আলম ডাবলুর সঙ্গে। তিনি কালবেলাকে বলেন, কয়েক বছর ধরে তিনি বিদেশে আলু পাঠাচ্ছেন। চট্টগ্রামের অ্যাগ্রোকাগরি কমোডিটিজ নামে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে এবার ১৭ টাকা কেজি দরে শানশাইন জাতের আলু তিনি বিক্রি করেছেন। এই আলু ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যাবে।
তিনি বলেন, এবার তিনি ৮ একর জমিতে আলুর চাষ করেছেন। স্থানীয় বাজারে এবার আলুর দাম নেই। অনেক কৃষকের খরচের টাকাই উঠছে না। তবে যে দরে এখন তিনি আলু রপ্তানি করছেন তাতে উৎপাদন খরচ উঠলেও লাভ হবে না। দামটা আরেকটু বাড়ানো দরকার।
বিরাহিম গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা মোকছেদুল ইসলাম জানান, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি কয়েক বছর ধরে নেপাল, মালয়েশিয়া, সৌদি, দুবাই, হংকং আলু পাঠাচ্ছেন। এবার প্রাথমিকভাবে মালয়েশিয়ায় শানশাইন জাতের আলু পাঠানো শুরু করেছেন। তিনি যে পরিমাণ অর্ডার পাচ্ছেন তাতে করে এবার তিনি কমপক্ষে ৩ হাজার টন আলু রপ্তানি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর এ উপজেলায় ১৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। তবে কৃষকদের দাবি, চাষের পরিমাণ ২০ হাজার হেক্টরেরও বেশি, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। গত বছর আলুর দাম বেশি থাকায় অনেক কৃষক এবার অধিক পরিমাণ জমিতে আলু চাষ করেছেন। একদিকে দাম নেই, অপরদিকে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এ বছর আলুর সংরক্ষণ ব্যয় বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়ায় সংকট যেন আরও ঘনীভূত হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্নভাবে প্রতিবাদও জানাচ্ছেন কৃষকরা।
সম্প্রতি স্থানীয় বাজার ঘুরে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি স্ট্রিক জাতের আলু ১০-১২ টাকা, সেভেন জাতের আলু ৮-১০ টাকা এবং লাল পাকরি জাতের আলু ১২-১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যেখানে গত বছর দাম ছিল প্রায় দ্বিগুণ।
আলুর উত্তোলনের মৌসুম এখনও পুরোদমে শুরু না হলেও আগাম আলু রপ্তানি শুরু হওয়ায় কৃষকরা একটুখানি আশার আলো দেখছেন।
কৃষকরা বলছেন, আলুর ন্যায্য দাম নিশ্চিতে কোল্ড স্টোরেজের সংরক্ষণ খরচ কমানো, বেশি বেশি রপ্তানির উদ্যোগ এবং স্থানীয় বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। অন্যথায় বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ে কৃষকরা ভবিষ্যতে আলু চাষে নিরুৎসাহিত হতে পারেন, যা দেশের কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, এবার আলুর ফলন রেকর্ড পরিমাণ হয়েছে। আলুর উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগের পক্ষ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি হওয়ায় আলুর দাম কিছুটা কম। তবে কিছু কিছু এলাকা থেকে আলু রপ্তানি শুরু হওয়ায় আমরা আশা করছি কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবেন। রপ্তানি বৃদ্ধিসহ কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আমরা চেষ্টা করছি।
মন্তব্য করুন