পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে চট্টগ্রাম ওয়াসায় অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ সময় দুদক কর্মকর্তারা প্রকল্পটির নির্মাণকাজে বিভিন্ন অনিয়ম খুঁজে পেয়েছেন। সরেজমিন গিয়ে ট্রিটমেন্ট প্লান্টে ফাটলও দেখতে পেয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে অভিযোগ পেয়ে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক সাঈদ মোহাম্মদ ইমরানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল এই অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান শেষে সাঈদ মোহাম্মদ ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, হালিশহরে ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল। সেখানে নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারে অনিয়ম অর্থাৎ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে— এ ধরনের অভিযোগ ছিল। আমরা সরেজমিনে গতকাল সকালে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট পরিদর্শন করে অনেকগুলো ফাটল দেখতে পেয়েছি। এই ফাটল দেখার পর ওয়াসা কার্যালয়ে এসেছি এবং প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি।
প্লান্টে ফাটলের বিষয়টি প্রকল্প পরিচালক অবগত আছেন বলে জানিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, তা জানতে চেয়েছি। তিনি বললেন, প্রকল্পের কনসালটেন্ট ফার্মের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ফাটল সিল করার জন্য যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হবে, সেগুলো পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এখনো রিপোর্ট পাননি। রিপোর্টে রাসায়নিক যথাযথ পাওয়া গেলে ফাটলগুলো সিল করা হবে।
নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি খালি চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই। এটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞরা বলতে পারবেন। তবে ফাটল দেখা গেছে। এটি নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের ফলে অথবা পারিপার্শ্বিক কারণেও হতে পারে।
পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়ে সাবেক এমডির বিরুদ্ধে ফাইল গায়েবের অভিযোগ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাবেক এমডি ১৫ বছর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। বিশেষ করে ২০২০ সালে ওয়াসা ভবনের তৃতীয় তলায় একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি সাজানো ছিল বলে অভিযোগ এসেছে। যেখানে অনেকগুলো নথি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গায়েব করার কথা বলা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে জানতে চেয়েছি। ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির একটি তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের দেওয়া হয়েছে। এটি আমরা বিস্তারিত স্টাডি করে বলতে পারব।
সাবেক এমডি স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে এখানে লোকবল নিয়োগ দিয়েছেন, এমন অভিযোগের কথা জানিয়ে দুদকের এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা তার (এ কে এম ফজলুল্লাহ) শেষ ছয় মাসে যে নিয়োগ বা বদলিগুলো হয়েছে, এ বিষয়ক নথিপত্র চেয়েছি। সচিব এগুলো দেওয়ার কথা বলেছেন। সেই নথিপত্র পেলে আমরা যাচাই-বাছাই করে নিয়োগবিষয়ক কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, জানতে পারব।
অভিযানে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পেয়েছেন কি না— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সাঈদ মোহাম্মদ ইমরান বলেন, ‘কিছুটা তো অনিয়ম অবশ্যই আছে। এই যেমন আমরা নিয়োগ-সংক্রান্ত একটি তথ্য পেলাম তাদের একজন কর্মকর্তার কাছে। আরও কয়েকজন স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। এটা এলে রেকর্ডপত্র যাচাই করে বলতে পারব। অনিয়ম হলে আমরা যথাযথ নিয়মে ব্যবস্থা নেব।’
২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় ‘চট্টগ্রাম মহানগরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন’ প্রকল্প। ডিপিপি অনুযায়ী এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৩ সালে। তবে ২০২৪ সাল শেষে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৬১ শতাংশ। দুই দফায় দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর পর হাতে আছে এখন প্রায় ছয় মাস। এরই মধ্যে আরও একবছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।
মন্তব্য করুন