বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার পৌর শহরের পশ্চিম ঢাকা রোডে পানি নিষ্কাশনের খালের ওপর পুরোনো কালভার্ট ভেঙে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নতুন সেতু নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। আগামী জুনের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা; কিন্তু যে খালে পানি নিষ্কাশনের জন্য সরকারি বিপুল অর্থ ব্যয়ে সওজ সেতু নির্মাণ করছে, সেই খালের মুখ ভরাট করে বিপণিবিতান নির্মাণ করেছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি।
এতে বর্ষায় পৌর শহরে জলাবদ্ধতার শঙ্কার কথা জানিয়ে গত ২১ জানুয়ারি বগুড়া ও নওগাঁর জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর পরও খালের বন্ধ মুখের সামনে সেতু নির্মাণ হলে পানি নিষ্কাশনে সেটি কোনো কাজে আসবে না।
সওজ সূত্রে জানা যায়, দুই জেলার সীমান্তে বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কে আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পশ্চিম ঢাকা রোডের চারমাথার পূর্বপাশে একটি খালের পুরোনো কালভার্ট ভেঙে ২ কোটি ৮৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে গার্ডার সেতু নির্মাণ করছে সওজ। গত বছরের ১৪ জুলাই নওগাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমিনুল ইসলাম ট্রেডার্স কার্যাদেশ পেয়ে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করেছে।
কার্যাদেশ অনুযায়ী, আগামী ২৬ জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা রয়েছে। কিন্তু যে খাল পারাপারে প্রায় তিন কোটি টাকার সেতু নির্মাণ চলছে, সেই খালেরই মুখ ভরাট করে ২০০৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সেখানে বিপণিবিতান নির্মাণ করেছেন কাজী আব্দুর রশিদ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। আব্দুর রশিদের মৃত্যুর পর বর্তমানে এসব জায়গা তার ছেলেদের দখলে রয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পশ্চিম ঢাকা রোড থেকে খালটি উত্তরদিকে বশিপুর হয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে রক্তদহ বিলের খালে মিশেছে। দক্ষিণেও খালের দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার। দক্ষিণে সান্তাহার সরকারি কলেজ ও নাটোর বাইপাসের পাশ দিয়ে এটি রক্তদহ বিলে মিশেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কে সান্তাহার- ঢাকা রোড থেকে পৌর শহরে প্রবেশপথে শ্রমিকরা সেতু নির্মাণ করছেন। নির্মাণকাজ চলা সেতুর দক্ষিণে খাল ভরাট করা হয়েছে অনেক আগেই। খালের মুখ ভরাট করে সেখানে বিপণিবিতান নির্মাণও করা হয়েছে। সে অবস্থায় নতুন সেতু নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ খালটি ব্রিটিশ আমলের। ২০০৫ সালের দিকে খালের দক্ষিণমুখ ভরাট করে সেখানে বিপণিবিতান নির্মাণ করেছিলেন কাজী আব্দুর রশিদ। সে সময় তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন। এজন্য খালের জায়গা মালিকানা দাবি করে তিনি তা ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করেছিলেন।
মাহমুদ আলী আকবর নামে স্থানীয় আরেক ব্যক্তি বলেন, এ খাল দিয়ে পৌর শহরের বেশকিছু এলাকার পয়ঃনিষ্কাশন হয়। সেই খাল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করায় এলাকাবাসী একবার একজোট হয়ে স্থাপনা ভাঙতে গেলে গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। কিন্তু এ ঘটনায় উল্টো আবদুর রশিদই বাদী হয়ে ২৩ জনকে আসামি করে মামলা দেন।
সান্তাহার পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারি খাল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করায় এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তা উচ্ছেদ করতে গেলে আমাকেও মামলা দিয়ে হয়রানি করানো হয়েছিল।
মরহুম কাজী আব্দুর রশিদের ছেলে আতিকুর রহমান রিপন বলেন, ‘বিপণিবিতানটি ব্যক্তিমালিকানা জায়গায় রয়েছে। তাছাড়া সরকার সেটি অ্যাকোয়ার করে নিলেও নির্মাণাধীন এই ব্রিজ দিয়ে পানি প্রবাহিত হবে না। কারণ বিপণিবিতানের পেছনে বাড়িঘরসহ নানা স্থাপনা রয়েছে। পানি প্রবাহের বিষয়টি মাথায় না রেখেই ব্রিজ নির্মাণ করায় এত বড় একটি প্রকল্প এখানে বাস্তবায়ন করা ঠিক হচ্ছে না। স্থানীয় কিছু লোক আছে শত্রুতামূলকভাবে আমাদের বিপণিবিতানটাকে সরকারি খাস জায়গা বলে প্রচার করছেন; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি আমাদের কবলাকৃত সম্পত্তি।
জানতে চাইলে সওজ বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সেতু নির্মাণকাজ শেষ হলে খালের মুখ ভরাট করে নির্মিত স্থাপনা অপসারণের জন্য জেলা প্রশাসনকে লিখিত চিঠি দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন