অন্তর্বর্তী সরকারকে বিএনপি শুরু থেকেই সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে জানিয়ে দলটির প্রধান অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না বলেছেন, এই সরকারের কাছে আমরা সার্বিক সহযোগিতা চাই। তাদের কাছে কোনো প্রকার বৈষম্য আশা-প্রত্যাশা করি না।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লক্ষ্মীপুর আউটার স্টেডিয়ামে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা এবং পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবিলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
যুবদল সভাপতি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই বিএনপি সাথে ছিল। হাসিনার শত নির্যাতনের মধ্যেও রাজনীতির মাঠে বিএনপি ছিল। বিগত ১৬ বছরে একদিনের জন্যও বিএনপি মাঠ থেকে সরেনি। বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কয়েকজন ছাত্র উপদেষ্টা হয়ে সরকারে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। তাদেরকে আমি একটাই অনুরোধ করবো, দয়া করে আমাদের কোনো নেতাকে নিয়ে নেতিবাচক কোনো শব্দ ব্যবহার করবেন না। আশা করি, আপনারা তাদের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে কথা বলবেন। আর একটি কথা, গত ৩টি নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। তাই অবিলম্বে এ দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। সরকারকে বলব, নির্বাচনী রোডম্যাপের পথে এগিয়ে চলুন।
এ সময় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা দীর্ঘ সময় ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন। আমাদের আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি। একটি অবাধ-সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়াটাই আমাদের শেষ আন্দোলন। তাই ওই পর্যন্ত সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে, জনগণের কাছাকাছি থাকতে হবে।
মোনায়েম মুন্না বলেন, শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসনের সময় আমি কয়েকবার কারাবরণ করেছিলাম। পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের কাছে কেউই রেহাই পায়নি। সবাই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতিত হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন করেছিল তৎকালীন এক-এগারোর সরকার। তাকে নির্যাতনের মধ্য দিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল। দীর্ঘ সময় তিনি দেশের বাইরে থেকেও দেশের মানুষের কল্যাণে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিলেন। তাই আজকে আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, অবিলম্বে তারেক রহমানের সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, তারেক রহমানের সমসাময়িক আর কোনো জনপ্রিয় রাজনীতিক এই দেশে নেই। তার মতো একজন দক্ষ ও জনপ্রিয় সংগঠককে সম্মানের সহিত দেশে ফিরিয়ে আনাই এখন আমাদের একমাত্র দাবি। তারেক রহমান বলেছেন- আজ আমাদের সম্মিলিত আন্দোলনের যে অর্জন, তা কোনোভাবেই ব্যাহত হতে দেওয়া যাবে না।
সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা শাখার আহ্বায়ক শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানির সভাপতিত্বে এবং জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু ও যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. হাছিবুর রহমানের যৌথ সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভূইয়া, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ (ভিপি হারুন) ও ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় সহ-শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিমসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে যুবদল, ছাত্রদল, কৃষক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলের জেলা- উপজেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটের সহস্রাধিক নেতাকর্মী-সমর্থক উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন