ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর) বলেছেন, আমরা ইসলাম, দেশ ও মানবতার পক্ষের শক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী দিনে দেশ গড়ার কাজ করতে চাই। ইসলামের পক্ষে বৃহত্তর ঐক্যের জন্য আমাদের প্রয়াস সফল হবে ইনশাআল্লাহ।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঐতিহাসিক চরমোনাই’র বার্ষিক মাহফিলের দ্বিতীয় দিন দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম, শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক নেতাদের অংশগ্রহণে আয়োজিত ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন তিনি।
ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, যখন কোনো বাতিল শক্তি মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছে তখনই এদেশের ওলামায়ে কেরাম প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে। তেমনিভাবে আগামী নির্বাচনে সব বাতিল অপশক্তি রুখে দিয়ে ইসলামকে রাষ্ট্রক্ষমতায় আনার জন্য সব ইসলামী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
এসময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, আমি মনে করি আমাদের অন্তরের ঐক্য হলে বৃহত্তর ঐক্য সম্ভব। ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠায় এদেশের ইসলামপন্থিদের টেকসই ঐক্যে আমরা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ছাড় দিতে প্রস্তুত।
তিনি মঞ্চে উপস্থিত সর্বস্তরের রাজনৈতিক নেতাদের বলেন, যাই হোক না কেন আমরা কেউ আলাদা হবো না। তাহলেই ইসলামকে রাষ্ট্রক্ষমতায় আনা সম্ভব।
সম্মেলনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা মামুনুল হক তার বক্তব্যে বলেন, আজকে বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরামের হাতে অনেক বড় সুযোগ এসেছে। আমরা যদি এ সুযোগে ইসলামকে বিজয়ী করতে না পারি তবে আগামী দিনে এ জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না। আজকের বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের জাতীয় চাহিদা হলো ইসলামপন্থিরা এগিয়ে আসুক, আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ। তিনি বাংলাদেশের ইসলামপন্থিদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতির সংস্কৃতি উপস্থাপন করে বলেন- আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনে একটি বাক্স দিতে চাই।
তিনি বলেন, ওলামায়ে দেওবন্দের ধারায় প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় দল হলো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তাই এখন ঐক্যের জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। পীর সাহেব চরমোনাইর উদারতার উদাহরণ দিয়ে মাওলানা মামুনুল হক বলেন- মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীম সাহেব এটা করে দেখাতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। দেওবন্দি ধারার বাইরে জামায়াতে ইসলামী, সুন্নি এবং আহলে হাদিস আন্দোলনকে সঙ্গে নিয়ে আগামী দিনে ইসলামের পক্ষে একটি বাক্স দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, যারা দ্রুত নির্বাচন চায় তাদের সঙ্গে ভারতের সেনাবাহিনীর যোগসাজশ রয়েছে। এটা করা যাবে না। আমাদের দাবি স্পষ্ট- আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন। আগে স্থানীয় নির্বাচন এবং পরে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। কারণ যারা বিশৃঙ্খলা করতে চায়, তাদের আগে চিনে নিতে চাই। জনগণ আগে বিশৃঙ্খলাকারীদের বেঁধে ফেলতে চায়।
তিনি ওলামা সম্মেলনে আগত আলেমদের উদ্দেশে বলেন, আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের বিজয়ী করতে হবে। আমরা কাউকে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কাজ করবো না বরং ইসলামের পক্ষে এক বাক্স দিতে চাই। একথা শুনে কেউ কেউ পাগল হয়ে গেছে। এতে আমাদের কিছু যায় আসে না। সুতরাং আমরা এবার ইসলামী শক্তির বলয় বৃদ্ধি করতে চাই। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সর্বস্তরে মহিলা কমিটি গঠন ও সক্রিয় করার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, সারাদেশে আমাদের প্রার্থী প্রস্তুত আছে কিন্তু আগামী নির্বাচনে আমরা ইসলামী শক্তি এবং দেশপ্রেমিক শক্তি এক হয়ে কাজ করবো এজন্য যে আসনে যে দলের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয় তার পক্ষেই কাজ করতে হবে। ৬৫ হাজার জনপ্রতিনিধির মধ্যে আগামীদিনে কমপক্ষে ৪০ হাজার আলেম প্রতিনিধি দিতে চাই। সুতরাং আমাদের প্রস্তত থাকতে হবে।
ওলামা সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন বাংলাদেশের সভাপতি দয়াল কুমার বড়ুয়া, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, মিশর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আহমাদ সিদকী হাফিজাহুল্লাহ, ইসলামিক উম্মাহ ইউনিয়নের হেড অফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স ডক্টর আদেহ নুয়ানসা ইউবিসোনু (ইন্দোনেশিয়া), ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শামসুল আলমসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় অন্যান্য ওলামায়ে কিরাম।
মন্তব্য করুন