অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, আমরা এসেছি একটি স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে দিতে। অন্তর্বর্তী সরকার হেরে গেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। গণতন্ত্র শুধু হারাবে না, মানুষ তার মৌলিক অধিকার হারিয়ে ফেলবে। তাদের কণ্ঠ রুদ্ধ হবে।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ময়মনসিংহের সিলভার ক্যাসেল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগবিষয়ক এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণির সভাপতিত্বে দিনব্যাপী এ কর্মশালায় আরো বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রহমান, পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহানুল আলম, বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ ও রেঞ্জ ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমান, জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম, পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান।
এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমরা এসেছি ইতিহাসের যোগ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে নতুন ইতিহাস রচনা করতে। আমরা এসেছি বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার যে সংগ্রাম, সে সংগ্রামের ফসল হিসেবে। আমরা এসেছি শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ এদের রক্তের দায় থেকে বাংলাদেশের মানুষকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র উপহার দিতে। একটি স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে দিতে।
তিনি বলেন, আমরা জানি এ যাত্রায় যদি আমরা ফেল করি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রই শুধু হারাবে না, মানুষ তার মৌলিক অধিকার হারিয়ে ফেলবে। তাদের কণ্ঠ রুদ্ধ হবে। মানুষ যে বাংলাদেশকে ভালোবাসে, সে বাংলাদেশ আমরা দিতে পারবো না। আগামীর বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন এই সরকার নিয়েছেন, আমরা তার স্বপ্নের সারথি হয়ে একসঙ্গে কাজ করব।
তিনি আরও বলেন, আমরা ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যদিয়ে যে বাংলাদেশ পেয়েছি। প্রায় দুই হাজার তরতাজা জীবনের রক্তের বিনিময়ে আমাদের যে দায়িত্ব দিয়ে গেছে, সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একটি কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করছি। যে পথে আমাদের ইতিহাসের দায়ভার পড়েছে, আমাদের ব্যর্থ হলে আমরা উত্তর পুরুষের ভীরু কাপুরুষের উপমা হয়ে যাবো। যে পথে হাঁটতে গিয়ে আমরা একদিকে শহীদের দায়ভার পরিশোধের দায়িত্ব নিয়েছি, অন্যদিকে আমাদের সামনে ফ্যাসিস্টদের মোকাবিলা করার চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছরে ৬০ লাখেরও বেশি মানুষকে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় আসামি করা হয়েছে। এসব মামলার অধিকাংশ বাদী পুলিশ। বিচার বিভাগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আপনারা নতুন করে জুডিসপ্রিডেন্স লেখার সুযোগ পেয়েছেন। অতীতে জুডিসপ্রিডেন্স লিখতে গিয়ে, রায় দিতে গিয়ে, জামিন দিতে গিয়ে যে তথ্য ফলো করতেন, সেটা হলো এফআরআইয়ে নাম নাই সুতরাং জামিন দেওয়া যায় না। আর নন-বেলিবল মামলায় জামিন দিয়েছেন। আপনাদের কাছে নিবেদন, আপনারা জুডিসপ্রিডেন্স রচনা করুন। যারা ফ্যাসিস্ট, যারা ৩৬ জুলাইয়ে মানুষের রক্ত ঝরিয়েছে, পাখির মতো গুলি করে মানুষ মেরেছে, তাদের গুলি করার প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য আমাদের এখনো জোগাড় করতে সময় লাগছে। জুলাই বিপ্লবের মামলাগুলো একটু ভিন্নভাবে জুডিসপ্রিডেন্স রাখার সুযোগ নিন।
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে কারা ফ্যাসিজমের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কারা ফ্যাসিজমকে লালনপালন করেছেন এবং এখনো পরোক্ষভাবে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আপনাদের কাছে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করছি, আপনারা এই জায়গায় নতুন করে জুডিসপ্রিডেন্স রচনা করুন।
অ্যাটর্নি জেনারেল পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে, একজন আসামিকে ফরোয়ার্ড করলে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করুন। এফআরআইয়ে নাম না থাকতে পারে কিন্তু তাকে কী কারণে গ্রেপ্তার করলেন সেটার পেছনের কারণটা কী, সে কীভাবে অপরাধে অংশগ্রহণ করেছে, এ কথাগুলো থাকলে বিচার বিভাগে জুডিসপ্রিডেন্সে অনেক সহজ হবে।
তিনি পাবলিক প্রসিকিউটরদের উদ্দেশ করে বলেন, আপনাদের ইমানি দায়িত্ব, প্রসিকিউশন যে মেটিরিয়ালস দেবেন সেগুলো সুন্দরভাবে আদালতে উপস্থাপন করুন। আপনাদের কোনো গাফিলতি আর দুর্নীতি মনিটর করা হচ্ছে। আমাকেও মনিটর করা হয়। দুর্নীতির প্রশ্নে আমাদের জিরো টলারেন্স আছে। ফ্যাসিজমকে আমরা বিচারের মুখোমুখি করতে চাই।
তিনি বলেন, দিল্লিতে বসে কীভাবে অপরাধে উসকানি দেওয়া হচ্ছে। এখন উনাকে আসামি করলে যদি বলা হয়, আমিতো দিল্লীতে ছিলাম। তিনি অবশ্যই দিল্লিতে ছিলেন। ইউটিউব এখন অপরাধের সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। ডিজিটাল ফরেনসিক করলে এসমস্ত ডিজিটাল এভিড্যান্স হিসেবে আসতে পারে। তাই আপনারা জুডিসপ্রিডেন্স লেখার ক্ষেত্রে, জুডিসপ্রিডেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে, জুডিসপ্রিডেন্সের উৎস তৈরি করতে সমস্ত ঘটনাপ্রবাহকে সামনে নিয়ে আসেন। সেখানেই একজন আইনের ব্যক্তিদের বিজ্ঞতার পরিচয়। সেখানেই লার্নেড ল’ইয়ার হয়, সেখানেই বিজ্ঞ বিচারক হয়।
কর্মশালায় ময়মনসিংহ বিভাগের সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিচারক, আইনজীবী ও সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন