সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয় স্মৃতিসৌধে। ভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পেরিয়ে গেলেও উপজেলা সদরে নির্মাণ হয়নি শহীদ মিনার। বাধ্য হয়ে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তর, তাহিরপুর থানা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্মৃতিসৌধেই ভাষা শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৩৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২১টি মাধ্যমিক, নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি ডিগ্রি কলেজ ও ৬টি আলিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। তার মধ্যে ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১টি ডিগ্রি কলেজে শহীদ মিনার রয়েছে। মাদ্রাসাসহ বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আজও শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের মধ্য তাহিরপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে তোফাজ্জল হোসেন শাওন (৩২) বলেন, আমি ছোট থেকেই দেখে আসছি উপজেলা সদরে অবস্থিত স্মৃতিসৌধেই ২১ ফেব্রুয়ারিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ছোট বয়সে ভাবতাম এটাই শহীদ মিনার। সব জায়গায় শহীদ মিনারেই ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। তবে আমাদের এখানেই ব্যতিক্রম।
রতনশ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফিফ উল্লাহ বলে, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস জানি। টিভি আর মোবাইলে দেখি ২১ ফেব্রুয়ারিতে নিজ স্কুলের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানায় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু আমাদের স্কুলে শহীদ মিনার না থাকায় কোনো ভাষা দিবসে ফুল দিতে পারিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর-রশিদ বলেন, মাতৃভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন সেই ভাষা শহীদদের কৃতিত্ব অপরিসীম। শহীদ মিনার প্রতিটা বাঙালির মনে চেতনা জাগায়। ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ ও মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে উপজেলা সদরসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন করা জরুরি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল আওয়াল বলেন, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়নি সেগুলোতে শহীদ মিনার স্থাপনের ব্যাপারে এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে প্রত্যেকটা বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হাসেম বলেন, উপজেলা সদরে একটি শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে। জায়গাও নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যেই কাজ শুরু করা হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ে কীভাবে শহীদ মিনার তৈরি করা যায়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
মন্তব্য করুন