নাটক কিংবা সিনেমায় পাতি নেতার পাবলিক টয়লেট দখল করার দৃশ্য দেখা গেলেও বরগুনার বেতাগীতে বাস্তবে এমনই ঘটনা ঘটিয়েছেন মারুফ রেজা নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা। বাজারের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের জন্য তৈরি পৌরসভা থেকে নির্মিত এ পাবলিক টয়লেট দখল করায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বাজারের ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। এ ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং বাজারে আসা সাধারণ মানুষ।
ব্যবসায়ী ও জনসাধারণের ভোগান্তি লাঘবে দখল হয়ে যাওয়া পাবলিক টয়লেট উদ্ধার করাসহ অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা মারুফ রেজার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বেতাগী পৌরসভার প্রশাসক মো. বশির গাজী।
বেতাগী পৌর কর্তৃপক্ষ সূত্রে ও সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, বাজারের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য ২০২২ সালে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে পৌর শহরের মাদ্রাসা সড়কে (বেতাগী বাজারের ব্রিজের পশ্চিম প্রান্তে) একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করে বেতাগী পৌরসভা। কিন্তু ৫ মাস আগে পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়েই বাজারের ব্যবসায়ীদের জন্য নির্মিত একমাত্র পাবলিক টয়লেটটি দখল করেন মারুফ। স্থাপনাটির মধ্যে থাকা দেওয়ালসহ প্যান, পয়ঃনিষ্কাশনের পাইপ ভেঙে ফেলে সেখানে দুটি দোকান ঘর নির্মাণ করেন মারুফ রেজা নামের ওই আওয়ামী লীগ নেতা। সেখানের একটি দোকান ইতোমধ্যে ৫ বছরের জন্য ভাড়াও দিয়েছেন তিনি।
দোকানের বর্তমান ভাড়াটিয়া বুশরা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জহিরুল ইসলাম মোজাম্মেল কালবেলাকে বলেন, গত ৩-৪ মাস আগে ৫ লাখ টাকা অগ্রিম ও মাসিক ৩ হাজার টাকা চুক্তিতে ৫ বছরের জন্য তার কাছে দোকানটি ভাড়া দিয়েছেন মারুফ রেজা।
এখানে পাবলিক টয়লেট ছিল কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই, এ বিষয়ে মালিকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি।
স্থানীয় আশেপাশের একাধিক ব্যবসায়ী পাবলিক টয়লেটটি পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়ে কালবেলাকে বলেন, বেতাগী বাজারে ব্যবসায়ীদের জন্য আর কোনো পাবলিক টয়লেট নেই। প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে বাজারের অপর প্রান্তে খোলা জায়গায় অথবা লঞ্চঘাটে টয়লেট ব্যবহার করতে হয়। এখানে আগে পাবলিক টয়লেট ছিল, সেটি কয়েকমাস আগে মারুফ রেজা দখল করে ভাড়া দিয়েছেন। টয়লেটটি না থাকায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হয়।
বাজারে আসা একাধিক সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা হলে তারা কালবেলাকে জানান, পৌর শহরে পাবলিক টয়লেট না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কয়েকদিন আগে বাজারে আসা এক নারীর প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে সারা বাজার ঘুরেও কোনো জায়গা না পেয়ে এক ভাইয়ের সহযোগিতায় একটি বাসায় গিয়ে কোনো মতে রক্ষা পায়। ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের জন্য পাবলিক টয়লেটটি চালু করা খুবই প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা মারুফ রেজা তার স্থাপনায় আগে পাবলিক টয়লেট ছিল মর্মে স্বীকার করে কালবেলাকে বলেন, ব্রিজের ওখানে রেকর্ডিয় সম্পত্তিতে আমার ৬টি দোকান ছিল। ব্রিজ নির্মাণের সময় আমার দোকানগুলো সরিয়ে দিয়েছিলাম। পরে ডিসি অফিসে যোগাযোগ করে টয়লেট অপসরণ করতে বলি এবং তাদের পরামর্শ নিয়ে আমি সেখানে দোকান করেছি। তবে এর আগের পৌর মেয়র আমার দোকান ঘরটিকে লিখিতভাবে অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন। এ বিষয়ে ডিসি অফিসে একটি কাগজের ফাইল রাখা আছে বলে জানান তিনি।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বেতাগী পৌর প্রশাসক মো. বশির গাজী কালবেলাকে বলেন, মারুফ রেজা বাজারের গণশৌচাগারটি (পাবলিক টয়লেট) দখল করার বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। ইতোমধ্যে বেতাগী পৌরসভা থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি আমরা গণশৌচাগারটি উদ্ধার করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে দেব।
এ কর্মকর্তা আরো জানান, তার (মারুফ রেজা) বিরুদ্ধে ভূমি দখল প্রতিকার আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ রয়েছে।
মন্তব্য করুন