কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন আগামী ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে সে পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন পড়ছে না প্রার্থীদের। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে সমিতির ১৫টি পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তারা সবাই বিএনপি–সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ এবং জামায়াতে ইসলামী–সমর্থিত ইসলামী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের আইনজীবী। যেহেতু কোনো পদে একাধিক প্রার্থী নেই, তাই আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের দিন তাদের বিজয়ী ঘোষণা করা হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
বুধবার রাতে যাচাই-বাছাইয়ে তাদের সবার মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী মফিজুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) কালবেলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে একসঙ্গে সবাই বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার নজির নেই বলে জানিয়েছেন একাধিকজ্যেষ্ঠ আইনজীবী। সর্বশেষ গত বছররে ৭ মার্চ জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে ২০২৪-২৫ সেশনের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট ১৫টি পদের মধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১০টিতে আওয়ামী লীগপন্থিরা জয়লাভ করেন। বাকি পাঁচটিতে বিএনপি-জামায়াতপন্থিরা বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগ–সমর্থিত আইনজীবীদের কেউই এ বছর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি।
জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্র জানায়, গত সোমবার ২০২৫-২৬ সেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ছিল মনোনয়নপত্র সংগ্রহের তারিখ। বুধবার জমা এবং একই দিন বিকেলে যাচাই-বাছাই। বৃহস্পতিবার প্রার্থীদের খসড়া তালিকা প্রকাশ, ২৩ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ২৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও আগামী ৬ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট তৌহিদুর রহমান বলেন, বুধবার বিকেলে যাচাই-বাছাইয়ে ১৫ জনের মনোনয়ন বৈধ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ চারটি পদে দুজন করে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। তবে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ এবং ইসলামী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের আইনজীবীরা ঐকমত্যেরভিত্তিতে প্রতিটি পদে একজন করে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সময়। যেহেতু কোনো পদে একাধিক প্রার্থী নেই, তাই সেদিন তাঁদের বিজয়ী ঘোষণা করা হতে পারে।
আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সভাপতি পদে ইসলামী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের মো. শহিদুল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের খন্দকার মিজানুর রহমান মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া সহসভাপতির দুটিপদে বিএনপিপন্থি মো. নুরুল ইসলাম এবং জামায়াতপন্থি মো. এরশাদুর রহমান, সহসাধারণ সম্পাদক পদে বিএনপিপন্থি নজরুল ইসলাম মানিক, ট্রেজারার পদে জামায়াতপন্থি মো. মুজিবুল ইসলাম, লাইব্রেরি সম্পাদক পদে বিএনপিপন্থি মোশাররফহোসেন, এনরোলমেন্ট সম্পাদক পদে বিএনপিপন্থি মো. শফিউল্লাহ, রিক্রিয়েশন সম্পাদক বিএনপিপন্থি মো. জহিরুল ইসলামএবং আইটি সম্পাদক পদে বিএনপিপন্থি মো. সাইফুল ইসলাম একক মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এ ছাড়া পাঁচটি সদস্যপদেরমধ্যে মো. ওবায়েদ উল্লাহ সরকার, মো. শরিফ হোসেন, মো. কামরুল হাসান, মু. সলিমুল্লাহ খান ও মো. মাসুদ আলম এককপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম জমা দেন।
আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের ভাষ্য, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন, এমন ৩২ আইনজীবীকে সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মামলায় হয়রানিমূলকভাবে আসামি করা হয়েছে। যার কারণে আওয়ামী লীগপন্থি কোনো আইনজীবীমনোনয়ন ফরম কিনতে পারেননি।
তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী মফিজুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা বর্তমানে যেই কমিটি নির্বাচন পরিচালনা করছি, তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগপন্থি। কুমিল্লায় অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়নি। তারা মামলার ভয়েমনোনয়নপত্র না কিনলে আমাদের কী করার আছে? আমরা কোনো গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করিনি।
মন্তব্য করুন