বিজিবির বাঁধার মুখে অবশেষে ফেনীর পরশুরাম সীমান্তে বল্লারমুখা বাঁধের পাশে বিএসএফ এর ব্যাঙ্কার সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বল্লারমুখ বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন ফেনী বিজিবির পরিচালক (অধিনায়ক) লে. কর্নেল মোশাররফ হোসেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে সীমান্তের লাইট বন্ধ করে বালির বস্তা দিয়ে ২/৩ অস্থায়ী পোস্ট তৈরি করেছিল বিএসএফ।
বল্লামুখার বাঁধের ৭০ মিটার অংশের ৩০ মিটার নোম্যান্সল্যান্ডে রয়েছে, এমন দাবি করে বিএসএফ বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণের শুরু থেকেই বাঁধা দিয়ে আসছে। পরে বিষয়টি নিয়ে বিজিবি কড়া প্রতিবাদ জানায়।
এর পরদিন মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে বল্লামুখার বাঁধ ৭০ মিটার অংশে কাজ করার সময় বিএসএফ ৩০ মিটার অংশে বাঁধ নির্মাণে বন্ধ করে দিয়ে ফের বাঁধা দেয়।
এ নিয়ে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ -এর মধ্যে বেশ কয়েকবার পতাকা বৈঠক শেষে জায়গা পরিমাপ করা হয়। গতকাল সকালে বল্লামুখার বাঁধের ৭০ মিটার নির্মাণে কাজ করার সময় বিএসএফ গিয়ে কয়েকটি স্কেভেটর বন্ধ করে দেয়।
এরপর থেকে ভারতের ঈশান চন্দ্রনগর ও বাংলাদেশের নিজ কালিকাপুর ক্যাম্পের বিজিবি-বিএসএফ'র মধ্যে একাধিক বৈঠক করা হয়। দুপুরে বিজিবি-বিএসএফের উপস্থিতিতে সীমান্তে ওই জায়গাটি পরিমাপ করা হয়। বিজিবির মজুমদার হাট কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার আবদুর রশিদের নেতৃত্বে সেখানে বিজিবি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ ইয়াসিন জানান, বিএসএফ সীমান্তে ২ থেকে ৩টি অস্থায়ী পোস্ট তৈরি করেছিল তবে বিজিবি নিশ্চিত করে যে, ৪০ মিটার অংশ জায়গাটি নোম্যান্সল্যান্ডে পড়েনি। এজন্য কাজ চালু রয়েছে।
বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়ন সূত্রে জানায়, বল্লার মুখে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান আছে। তবে শূন্য রেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে নতুন কাজ করতে হলে বর্ডার গাইড লাইন অনুযায়ী দুই দেশের অনুমোদন প্রয়োজন। এখানে ৭০ মিটার কাজের মধ্যে ৩০ মিটার ১৫০ গজের মধ্যে রয়েছে। এ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের মধ্যে সমন্বয় চলছে। অনুমোদন সাপেক্ষে কাজ শেষ করা হবে। বর্তমানে ১৫০ গজের বাইরে ৪০ মিটারে কাজ চলছে। এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি আরও একবার বল্লামুখার বাঁধ নির্মাণে বাধা দেওয়া হয়েছিল।
তবে ৪০ মিটার যা ১৫০ গজের বাইরে সেই কাজ চলমান ছিল এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইনানুযায়ী শূন্যরেখা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাঁধ পুন-নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়।
অন্যদিকে বর্ষা মওসুম আসার আগে নিজেদের বাড়ি-ঘর ও সহায় সম্বল বাঁচাতে বল্লামুখা বাঁধ দ্রুত পুনর্নির্মাণ চান স্থানীয়রা। গত বছরের জুলাই-আগস্টে দেশের অভ্যন্তরে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফেনী জেলার পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, দাগনভূঞা, ফেনী সদর ও ফুলগাজী উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। স্মরণকালের ওই বন্যায় জেলার কয়েক লাখ মানুষ ঘরবাড়ি, ফসল ও সম্পদ হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়।
বন্যায় মুহুরি কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ১০২টি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। যার মধ্যে ৯৬টি ভাঙা অংশের কাজ মেরামত করা হয়। এতে ব্যয় হয় ৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। পানির তোড়ে মুহুরি নদীর তীরবর্তী পরশুরামের নিজ কালিকাপুর সীমান্তের বল্লারমুখা বেড়িবাঁধের তিনটি স্থানে প্রায় ৫০০ মিটার বেড়িবাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকে এখানের বাঁধ পুনর্নির্মাণ দাবি জানিয়ে আসছিল এলাকাবাসী। একমাস ধরে বাঁধগুলো পুনর্নির্মাণ কাজ করছে ঠিকাদার।
ফেনী বিজিবির পরিচালক (অধিনায়ক) লে. কর্নেল মোশাররফ হোসেন কালবেলাকে জানান, বর্তমানে বল্লারমুখে ৭০ মিটার বাঁধ নির্মাণের মধ্যে ৪০ মিটার বাঁধের কাজ চলমান আছে। আর অবশিষ্ট ৩০ মিটার কাজ আপাতত বন্ধ আছে। এ বিষয় নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের সমন্বয় অব্যাহত আছে।
তিনি আরও বলেন, ৩০ মিটারের কাজ যথাযথ অনুমোদন পূর্বে যেন সম্পন্ন না করে তা নিশ্চিত করার লক্ষে বিএসএফ ৩টি অস্থায়ী পোস্ট (বাঙ্কার) স্থাপন করে, যা বিজিবির বাঁধার মুখে তারা সরিয়ে ফেলে। অনুমোদন সাপেক্ষে ৩০ মিটার কাজ সম্পন্ন হবে। বর্ডার এলাকায় নিয়ম মেনে বাঁধ নির্মাণে কাজ চলমান রাখার বিষয়ে বিজিবির সহায়তা অব্যাহত আছে।
মন্তব্য করুন