বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশ ভোটাধিকার ছাড়া চলতে পারে না। বিএনপি নির্বাচনের কথা বললে অনেকের গাত্রদাহ হয়। দেশকে স্থিতিশীল করতে অবিলম্বে নির্বাচন দিতে হবে। ভরাডুবির ভয়ে অনেকে নির্বাচন চান না। দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে কোনো না কোনো জায়গা থেকে বাতাস দেওয়া হচ্ছে।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপি দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে দেবে না। বিদেশে বসে অনেকে তরুণদের বিশৃঙ্খল করছে। অতি উৎসাহী করে তুলছে। সরকারকে সঠিক রাস্তা দেখানোই বিএনপির উদ্দেশ্য, বিব্রত করা নয়। ৩১ দফার মধ্যেই সব সংস্কারের রূপরেখা আছে। ২০২৩ সালে এসব সংস্কারের কথা বিএনপি বলে রেখেছে। কিছু কিছু রাজনৈতিক দল ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপিকে খাটো করতে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছেন। সকল ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, আমরা নিলে চাঁদা আর তারা নিলে হাদিয়া। এই দ্বিমুখী নীতি পরিহার করতে হবে। কিছু দল বার বার কোল বদল করে। কিছুদিন বিএনপির কোলে আবার কিছুদিন আওয়ামী লীগের কোলে থাকেন। দয়া করে একটা জায়গায় স্থির হোন। রাজনীতি নিয়ে খেলা বন্ধ করুন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, গত ১৭ বছরে দেশে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার সংকুচিত হয়েছে। এই সময়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে। জনগণের দুঃসময়ে বিএনপি সবসময় তাদের পাশে থেকে কখনো শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, কখনো বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, আবার কখনো দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিগত ৫ আগস্টের পর দেশের জনগণের মধ্যে যে প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে, তা হতাশায় পরিণত করা যাবে না। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তারেক রহমানের কঠোর প্রচেষ্টা জনগণ ও সুশীল সমাজের কাছে প্রশংসিত হচ্ছে।
এ সময় তিনি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সম্পর্কে বলেন, আপনারা (আওয়ামী লীগ) জাতির কাছে ক্ষমা চান, তওবা করেন, আপা আপা বললে আর হবে না। শেখ হাসিনা এখন আওয়ামী লীগের নেত্রী না। সে তার পরিবারের নেত্রী। তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেশ ছেড়েছে। তাদের পরিবারের কেউ এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি।
আলাল আরও বলেন, এই সরকার সবার সমর্থনে তৈরি হয়েছে। এত সমর্থন থাকার পরেও দ্রব্যমূল্যের দাম কমাতে ব্যর্থ এই সরকার। দাম কমাতে না পারলে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। বাণিজ্য উপদেষ্টা চাইলেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধ ও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনকালীন রোডম্যাপ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রে বিরাজমান ফ্যাসিবাদী শাসনের নানা চক্রান্ত ও অপচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার দাবিতে এই গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির খান, তাহসিনা রুশদীর লুনা, সাবেক সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) জিকে গেউছ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, মিফতাহ সিদ্দীকি, সহ ক্ষুদ্র ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, আব্দুল কাহের চৌধুরী শামীম, হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।
গণসমাবেশে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, মুক্তিযোদ্ধা দল, মহিলা দল, জাসাস, কৃষক দল, শ্রমিক দল, উলামা দল ও মৎস্যজীবী দল, উপজেলা ও পৌর বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল নেতাকর্মীকে নিজ নিজ ব্যানারে মিছিলসহ অংশগ্রহণ করেছেন।
মন্তব্য করুন