ক্ষমতার অপব্যবহার ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কমিটিতে স্থান দেওয়ার অভিযোগে সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিবকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে গালিবকে সিলেটে অবাঞ্ছিত ঘোষণার পাশাপাশি ঘোষিত সিলেট মহানগর আহ্বায়ক কমিটি প্রত্যাখ্যান করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মাহিদ হাসান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ গালিব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। তিনি দুদিন পরপর তার মনমতো কমিটি দিচ্ছেন। বিভিন্ন জায়গায় সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক পরিচয় দিচ্ছেন। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভাগীয় সমন্বয়কের কোনো পদ নেই।
বক্তব্যে বলা হয়, গালিব ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন। মহানগরের কমিটির আহ্বায়ক পদ ছাত্রলীগ নেতাকে দেওয়া হয়েছে। বিগত জুলাই আন্দোলনে বুলেটকে ভয় না পেয়ে যারা সামনের কাতারে ছিলেন, যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, যারা সাহসী ভূমিকা রেখেছেন সেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, মহানগর কমিটিতে শতাধিক পদ থাকলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র তিনজনকে রাখা হয়েছে। এ কমিটি তারা প্রত্যাখ্যান করে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা জানানো হয়।
এদিকে গালিবকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার পর বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) গালিব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন ‘মহানগর কমিটিতে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অনেক ভুল হওয়ায় পেজ থেকে কমিটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কমিটি প্রকাশের পরে অনেকেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কারও কোনো স্পেসিফিক অভিযোগ থাকলে বিভাগীয় সফরে যারা কমিটি গঠনের দায়িত্বে ছিলেন তাদের দিতে বলা হচ্ছে। কমিটি স্থগিত থাকবে। সবকিছু সংশোধন করে পুনরায় কমিটি প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া সম্মিলিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট এবং সম্মিলিত মেডিকেল কলেজ, সিলেটের কমিটি গঠনের কাজ চলমান আছে। যারা এই দুটা ইউনিটে কাজ করতে আগ্রহী তাদের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, লিডিং ইউনিভার্সিটি, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও আরটিএম আল কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক ফয়সাল হোসেন কালবেলাকে বলেন, আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, যারা গুলি খেয়েছে, যারা অত্যাচারের শিকার হয়েছে এবং যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমন্বয়ক ট্যাগ নিয়েছিল, তাদেরকে কমিটিতে রাখা হয়নি। তাদের জায়গায় কমিটিতে রাখা হয়েছে সেইসব শিক্ষার্থীদের, যারা আন্দোলনের সময় গুরুত্বপূর্ণ কোনো ভূমিকা রাখতে সাহস করেনি।
এছাড়া, সিলেট মহানগরের কমিটি হলেও মৌলভীবাজার মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের নাম দেওয়া হয়েছে, অথচ তাদের নামগুলো ছেলে শিক্ষার্থীদের।
সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গালিব ভাইয়ের বিষয়ে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে সিলেটে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গালিবকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ খুব একটা চিনত না। তাকে কেন এতো বড় দায়িত্ব দেওয়া হলো এটা বোধগম্য নয়।
মন্তব্য করুন