পিরোজপুরের নেছারাবাদের একটি এতিমখানার নামে সরকারি বরাদ্দের টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. সাইদুর রহমান সাঈদের বিরুদ্ধে। তিনি উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক।
জানা যায়, নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের উত্তর উড়িবুনিয়া বলদিয়া হাফিজিয়া নূরানি মাদ্রাসা লিল্লাহ বোর্ডিং এতিমখানা ও খানকায়ে সালেহিয়া দ্বীনিয়া কমপ্লেক্সের নামে গ্রামীণ অবকাঠোমো রক্ষণাবেক্ষণ উন্নয়ন প্রকল্পে ওয়াশব্লক বাবদ ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ১ লাখ টাকা বলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ওই এতিমখানার সাবেক সভাপতি মো. সাইদুর রহমান সাঈদ উত্তোলন করলেও নানা অজুহাতে ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ স্থানীয়দের। এ ছাড়াও একই প্রতিষ্ঠানের এতিমদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত ২ লাখ ২৩ হাজার টাকা আত্মসাত করে প্রতিষ্ঠানে জমা না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে উত্তর উড়িবুনিয়া বলদিয়া এতিমখানা নূরানি মাদ্রাসার সুপার হাফিজ মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রত্যেক এতিমদের বরাদ্দকৃত ২ লাখ ২৩ হাজার টাকা উঠিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান সাঈদ নিয়ে গিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের এতিমদের জন্য বরাদ্দের টাকা কেন অন্যের পকেটে থাকবে।
সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন দফাদার বলেন, সাবেক সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৫ বছর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছেন। শুনেছি সে জেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত ওয়াশব্লকের ১ লাখ টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন। কোনো কাজ না করেই তিনি কীভাবে এই টাকা তুলে নিয়েছেন আমার বোধগম্য নই।
উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, সাইদুর রহমান সাইদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওয়াশব্লকের ১ লাখ টাকা এবং এতিমের সরকারি বরাদ্দের ২ লাখ ২৩ হাজার টাকা বর্তমান কমিটিতে জমা দিচ্ছেন না। তার কাছে একাধিকবার টাকা চাইলেও তিনি বারবার ওয়াদা করে যাচ্ছেন। টাকাটা মূলত ফেরত পাব কিনা বুঝতে পারছি না।
এ বিষয়ে পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. নুরুল আমিন জানান, শুনেছি সাবেক সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান সাঈদ আড়াই বছর আগে দুই ধাপে ২ লাখ ২৩ হাজার টাকা ধার বাবদ নিয়েছেন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রতিষ্ঠানে জমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিন্তু অদ্যবধি জমা হয়নি। জেলা পরিষদের বরাদ্দের ১ লাখ টাকা উত্তোলনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। বিষয়টা শুনেছেন বলে জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত সাবেক পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান সাঈদ কালবেলাকে বলেন, উপজেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত ১ লাখ টাকা আমার কাছে সংরক্ষিত আছে। ওই টাকা দুই একদিনের মধ্যেই ম্যানেজিং কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু এতিমের বরাদ্দকৃত ২ লাখ ২৩ হাজার টাকা হিসাব ঠিক নেই, শুধুমাত্র ২৩ হাজার টাকা থাকতে পারে। কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন দফাদারের সঙ্গে বসে হিসাব-নিকাশ করে প্রকৃত যে টাকা আমার কাছে সংগৃহীত আছে সেটা অবশ্যই জমা দেওয়া হবে।
নেছারাবাদ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তপন বিশ্বাস বলেন, এতিমদের বরাদ্ধকৃত টাকা আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে অভিযুক্তর বিরুদ্ধে যদি দোষ প্রমাণিত হয় অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শেখ নুরুল আলম জানান, জেলা পরিষদের বরাদ্ধকৃত ওয়াশব্লকের টাকা কাজ না করে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। অফিসে জমাকৃত কাগজপত্র দেখে জানাব। তবে আমার জানামতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বরাদ্দকৃত টাকা সব উঠিয়ে নিয়েছে।
মন্তব্য করুন