কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিন কিন্তু সম্প্রতি সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গাজীপুরে শুরু হয়েছিল একটি বিশেষ উদ্যোগ। পলাসোনা গিলারটেক এলাকার স্মার্ট এগ্রো ফার্মে চাষাবাদ হচ্ছিল বিলুপ্তপ্রায় মসলিন কার্পাস তুলার।
শতাব্দী প্রাচীন এই গাছের তুলা ব্যবহৃত হতো ঢাকাই মসলিন তৈরিতে, যা এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে সূক্ষ্ম ও অমূল্য কাপড় হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ঐতিহ্য হারিয়ে গিয়েছিল।
কয়েক বছর ধরে কৃষি বিজ্ঞানীদের তত্ত্বাবধানে গাজীপুরের এই ফার্মে আবার শুরু হয়েছিল এ গাছের চাষ, যাতে পুনরায় বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পে ঐতিহ্য ফিরে আসতে পারে। কিন্তু এক রাতেই এ স্বপ্নের সব কিছু শেষ হয়ে গেল।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে দুর্বৃত্তরা ফার্মের আড়াই শতাধিক বিলুপ্তপ্রায় মসলিন কার্পাস তুলার চারা গাছ কেটে ফেলে। এ ঘটনায় ৫ লাখ টাকা ক্ষতির দাবি করেছে ফার্ম কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষের দাবি ফার্মের জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরেই এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তাদের অভিযোগের তীর স্থানীয় বাসিন্দা রমজান আলী (৫৫), হাবিব মিয়া (৩৫), খলিলুর রহমান (৪৫), হাবীবুর রহমান মোল্লা (৪০), ইদ্রিস মোল্লা (৬০), সাইফুল ইসলাম (৩৮), কামরুল হাসান (৪২) ও মনিরুজ্জামানের (৪৮) দিকে।
ফার্মের কর্মকর্তা জুবায়ের রহমান বলেন, এ গাছগুলো শুধু আমাদের প্রকল্পের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, এগুলো আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ ছিল। এর তুলা দিয়ে যদি ঢাকাই মসলিন তৈরি করা যেত, তবে তা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হতো। কিন্তু দুর্বৃত্তরা এক রাতেই সব শেষ করে দিয়েছে।
এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের তুলা উন্নয়ন বোর্ডের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের একটি বড় উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছিল। ফার্মের ওই কর্মকর্তারা জানান, গাছগুলোতে তুলার ফলন আসতে শুরু করেছিল এবং তারা আশা করেছিলেন যে, ভবিষ্যতে দেশের বস্ত্রশিল্পে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচিত হবে।
ফার্মের আরেক কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, এটি শুধু একটি কৃষি উদ্যোগ নয়, আমাদের দেশের ঐতিহ্য রক্ষার সংগ্রাম ছিল। কিছু মানুষ এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক।
এ ঘটনার পর গাছা থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
গাছা থানার ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তদন্ত চলছে এবং তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনা শুধু একটি ফার্মের ক্ষতি নয়, এটি দেশের ঐতিহ্যের এক বড় ক্ষতি বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন সমাজ। তারা বলছেন, দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মন্তব্য করুন