তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য ভারতকে চাপ প্রয়োগ এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লালমনিরহাটের তিস্তা ব্রিজ পয়েন্টে ‘তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও মহাপরিকল্পনা’ বাস্তবায়নের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান।
এর আগে দুপুরে এ কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি। তিস্তাপাড়ের ১১৫ কিলোমিটারের ১১টি পয়েন্টে একযোগে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ জায়গায় আপনাদের নিরপেক্ষ থাকলে চলবে না, আপনাদের মুখ খুলতে হবে। ভারতকে বলতে হবে যে, আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা আমরা চাই। আর আপনি যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার, খুব তাড়াতাড়ি নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন। তাহলে দেশে যে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে তা আর থাকবে না, শান্তি ও স্থিতিশীলতা আসবে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তিস্তা পাড়ের মানুষের বাঁচার যে আহাজারি তার আওয়াজ আজ বেরিয়ে আসছে। তারা যখন গেট খুলে দেয় তখন পানির তোড়ে ঘরবাড়ি, গ্রাম, ধানের ক্ষেত সব ভেসে যায়। বন্ধ করে দিলে সব এলাকায় খরায় শুকিয়ে খটখট হয়ে যায়, তিস্তাপাড়ের মানুষের দুঃখ আর যায় না। এ সংগ্রাম আমাদের এই এলাকার মানুষের বাঁচা-মরার, এ সংগ্রামকে আমরা বন্ধ হতে দেব না।’
তিস্তার পানিচুক্তি নিয়ে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মানুষ ভেবেছে যে, যেহেতু তারা ভারতের বন্ধু সুতরাং পানি এবার পাওয়া যাবে। কিন্তু ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে সব বেচে দিয়েছে কিন্তু ভারত থেকে একফোঁটা পানি আনতে পারেনি। শুধু তিস্তা নয়, ভারত থেকে আসা ৫৪টি নদীর উজানে তারা বাঁধ দিয়েছে। নদীগুলো থেকে পানি তুলে নিয়ে গিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে আর এদিকে বাংলাদেশের মানুষ ফসল ফলাতে ও জেলেরা মাছ ধরতে পারে না। তারা জীবন ও জীবিকা থেকে বঞ্চিত হয়। প্রত্যেক মানুষকে আজকে কষ্টের মধ্যে করতে হয়েছে।’
স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়া প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে গত ১৫ বছর আমরা লড়াই করেছি। আমাদের ছেলেরা লড়াই করেছে ৩৬ দিনের সফল লড়াইয়ে স্বৈরাচার হাসিনা পালিয়ে এখন ভারতে। ভারত একদিকে পানি দেয় না, অন্যদিকে আমাদের শত্রুকে দিল্লিতে রাজার হালে বসিয়ে রেখেছে। সেখান থেকে বিভিন্ন রকমের হুকুম জারি করে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতকে পরিষ্কার করে বলতে চাই বাংলাদেশের মানুষদের সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব করতে চান তাহলে তিস্তার পানি দেন, সীমান্তে গুলি করে হত্যা বন্ধ করেন ও বড় দাদার মতো আচরণ বন্ধ করেন। আমরা আমাদের পায়ের উপর দাঁড়াতে চাই। আমরা আমাদের হিসসা বুঝে নিতে চাই। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাই, কিন্তু সেই বন্ধুত্ব সম্মানের সঙ্গে আমার যে পাওনা সেটি বুঝে নেওয়ার সম্পর্ক।’
তিস্তা পাড়ের মানুষদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘তিস্তাপাড়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তা সারা দুনিয়ায় নাড়া দিয়েছে। লড়াই না করে কোনো কিছু পাওয়া যায় না। লড়াইয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের তিস্তার পানি নিয়ে আসব, অধিকার আদায় করব।’
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে তিস্তাপাড়ের মানুষের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে একই মঞ্চে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বেবী নাজনীন, বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক প্রমুখ।
মন্তব্য করুন