তিস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে লালমনিরহাটের রাজপুর ইউনিয়নের চিনাতলী গ্রামের কৃষক আজিজার রহমানের বাড়ি। ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ এ কৃষক তার জীবনে তিস্তার বুকে ৪ বার ঘরবাড়ি হারিয়ে যাওয়া দেখেছেন। এবার যে জমিতে তিনি ঘর তুলে আছেন তা নদীতে ভেঙে গেলে আর যাওয়ার জায়গা নেই।
তিস্তা পানির ন্যায্য হিসসা এবং মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তার ১১টি পয়েন্টে একযোগে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিতে তিস্তা পয়েন্টে এসেছেন তিনি।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ কৃষকের সঙ্গে কালবেলার কথা হয়। তিনি বলেন, ‘বাড়ি পোড়া গেইলে তো জমি থাকে, কিন্তু নদীত ভাঙ্গি গেইলে আর কিচ্ছু পাওয়া যায় না। এবার যে জাগাত (জায়গায়) বাড়ি করি আছি যদি ফির নদীত ভাঙ্গি যায় তা হইলে আর যাওয়ার জায়গা নাই।’
এ কৃষক জানান, আগে তাদের বাড়ি ছিল তাজপুরে। কিন্তু নদীতে বাড়িঘর হারিয়ে এখন চিনাতলীতে নতুন করে আশ্রয় নিয়েছেন। বাপ-দাদার যে জমিজমা ছিল সব নদীতে ভেঙে গেছে। একমাত্র ছেলে এখন টাঙ্গাইলে গিয়ে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। তার আয়ে কোনো রকমভাবে সংসার চলছে।
শুধু আজিজার রহমান নন ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’ সংগঠনের ডাকা এ অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিতে তিস্তাপাড়ের ১১টি পয়েন্টে এসেছেন হাজার হাজার কৃষক ও স্থানীয় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। লালমনিরহাটের তিস্তা পয়েন্টে দুপুর ২টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর মধ্যে কর্মসূচিস্থলে নেমেছে মানুষের ঢল।
তিস্তাপাড়ের মানুষদের দাবি, নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে তারা এখন উদ্বাস্তু জীবনযাপন করছেন। তিস্তার দুইপাড়ে বাঁধ নির্মাণ ও নদী খনন করে তাদের বাঁচাতে হবে। এছাড়া মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে তাদের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ হবে বলে জানান।
তিস্তার ভাঙনের শিকার রাজপুর ইউনিয়নের আরেক কৃষক নুরজামাল বলেন, বাড়িঘর সব নদীতে গেছে। এখন তিনি ঘোড়ার গাড়ি চালান। ছয় মাস এই পেশাতে থাকলেও বাকি ছয় মাস স’মিলে কাজ করেন। পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবন চলছে বলে জানান তিনি।
দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচির দুই দিন নদীপাড়ে কাটাবেন তিনি- এ জন্য ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে এসেছেন। সত্তরোর্ধ্ব কৃষক নুরজামাল বলেন, সবই তো নদীতে চলে গেছে। এখন সরকার যদি আমাদের দিকে দেখে এই নদীর ব্যবস্থা না করে তাহলে মরা ছাড়া আর উপায় নেই। যে কোনো মূল্যে এ দাবি আদায় করতে হবে- এর বিকল্প কিছু নেই।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, গণদাবির এ আন্দোলন কর্মসূচিতে নদীভাঙনে ঘরবাড়িহারা মানুষ তাদের জীবনের গল্প শোনাবেন। এর পর ঘুড়ি উড়ানো, হাডুডু, বাটুল ছোড়া, দাড়িয়াবান্ধা খেলা চলবে। মঞ্চনাটক পরিবেশনা, ভাওয়াইয়া, পালাগান, জারিগান পরিবেশনা হবে কর্মসূচিতে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠানে ১১টি পয়েন্টে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়া দুই দিনের কর্মসূচিতে অংশ নেবেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা।
এ আন্দোলন কর্মসূচিতে যোগ দিতে তিস্তাপাড়ে আসছেন বিএনপির শীর্ষ ১৪ নেতা। লালমনিরহাট তিস্তা পয়েন্টে থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উলিপুরের থেতরাই পয়েন্টে থাকবেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রাজারহাটের সরিষাবাড়ি পয়েন্টে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, গঙ্গাচড়ার মহিপুর ব্রিজ পয়েন্টে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর তিস্তা ব্রিজ পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।
এছাড়া দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ। এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বাকি পয়েন্টগুলোতে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখবেন।
এছাড়াও নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতির জোনায়েদ সাকি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা এ দাবিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেবেন।
মন্তব্য করুন