স্কুলের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে ময়লার ভাগাড়। ভাগাড়ে দীর্ঘদিন ধরে জমতে থাকা ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এ ছাড়া স্কুলঘেঁষা ড্রেনের ময়লা ও পানি থেকে আসা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশে। এতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে কুমিল্লার চান্দিনার মাধাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
অভিভাবকরা জানান, অন্য স্কুলের শিক্ষার্থীরা টিফিনের সময় খেলাধুলা করলেও ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ময়লা-আবর্জনার কারণে তা করতে পারে না। এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষও চাইছে ভাগাড়টি সেখান থেকে সরিয়ে পরিবেশ সুন্দর করা হোক। উপজেলা প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার স্থান ঠিক করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাধাইয়া বাজারের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত মাধাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর পশ্চিম-দক্ষিণ ও পূর্ব-দক্ষিণ পাশে দীর্ঘদিন ধরে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এতে ওই জায়গা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এসব আবর্জনা আবার আশপাশের অনেকটা জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে আবর্জনা জমতে থাকায় বিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া স্কুলের পূর্ব পাশের দেয়াল ঘেঁষে বাজার ও বাসাবাড়ির ময়লা যাওয়ার ড্রেনের ময়লাযুক্ত দুর্গন্ধ পানি সড়কে উপচে পড়ছে। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা ওই স্থানে নাক চেপে পার হচ্ছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, আশপাশের বাসাবাড়ি ও বাজারের ময়লা ফেলায় ওই জায়গা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এসব ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরাও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন।
রকিব উদ্দিন ভূঁইয়া নামে এক অভিভাবক বলেন, এসব অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ক্লাস করা ও খেলাধুলা করতে না পারায় আমাদের বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্কুলের আশপাশ এলাকা পরিষ্কার রাখা জরুরি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বলেন, আশপাশের বাড়ির ও বাজারের একাংশের ময়লা এখানে নিয়মিত ফেলা হচ্ছে। আমরা বহুবার বাধা দিয়েছি। আমাদের বাধার কারণে এখন আর দিনের বেলা ময়লা না ফেলে রাতের বেলা ফেলা হচ্ছে। ড্রেনের ময়লা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন পরিদর্শন করে গেছেন। স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্রুত এ সমস্যার অবসান হবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে ময়লা ফেলা নিয়ে এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। আমরা আশপাশের বাসাবাড়ি ও বাজারের ব্যবসায়ীদেরও অবহিত করেছি। চেয়ারম্যান ও ইউএনওর সঙ্গে আবার কথা বলে বিষয়টির সমাধান করা হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান বলেন, ‘ময়লা-আবর্জনা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বায়ুদূষণের মাধ্যমে এগুলো পরিবেশের ক্ষতি করে থাকে। ফলে মানবদেহে জন্ডিস, টাইফয়েড, ডায়রিয়াসহ নানা রোগ ছড়ানোর শঙ্কা থাকে। বিশেষ করে কোমলমতি শিশুদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ ছড়ালে অনেকেরই বমিভাব, পেটব্যথা, মাথাব্যথাসহ নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যেরও ক্ষতি হতে পারে।
চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজিয়া হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে আবর্জনা ও ড্রেনের ময়লায় দূষণের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে। আবর্জনা অপসারণ করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন স্বাস্থ্যকর পরিবেশে পাঠ নিতে পারে সেজন্য শিগগিরই বিদ্যালয়ের পরিবেশ দূষণমুক্ত করা হবে।
মন্তব্য করুন