আট বছর ধরে তিস্তার ধারে ছোট খাল পারাপারে একটি সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখছেন নীলফামারীর ডিমলার ১০ গ্রামের বাসিন্দারা। কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেও আদতে কোনো কাজ হয়নি দেখে নিজেদের উদ্যোগে তৈরি করেছেন বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সাঁকো। এই সাঁকোই এখন একমাত্র ভরসা তাদের। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে ছোট খাল পার হচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষ।
সরেজমিনে উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ঝারসিংহেশ্বর ও খগারচর গ্রামে দেখা যায়, তিস্তা নদীবেষ্টিত বাঁধের রাস্তার পাশে প্রায় দুই বা আড়াই হাজারেরও বেশি পরিবারের বাস। নিজেদের উদ্যোগে বাঁশ ও কাঠের তৈরি সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে খাল পারাপার হচ্ছেন অনেক মানুষ। এ অবস্থা চলছে ৮-৯ বছর ধরে। একাধিকবার তারা জনপ্রতিনিধিদের আশ্বাস পেয়েছেন সেতু নির্মাণের। কিন্তু সেই আশ্বাস পূরণ হয়নি আজও। সাঁকোতে হরহামেশাই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।
জানা গেছে, ওই এলাকার সবাই প্রায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত। গ্রামের শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করে। আর্থসামাজিক উন্নয়নে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় সেতুটির অবদান উল্লেখযোগ্য। ২০১৬ সালে আকস্মিক বন্যায় তিস্তার ধারে আয়শা মেম্বারের বাড়ি থেকে খাড়াপাড়া সড়কটি ভেঙে যায়। এতে জনদুর্ভোগ বাড়ে ওই এলাকার মানুষের। তখন থেকে নানা প্রতিকূলতার মাঝে ফসল উৎপাদন করলেও পরিবহনের অসুবিধায় ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। এতে কৃষকদের বছরের পর বছর মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
জানা গেছে, বিগত নির্বাচনগুলোতে স্থানীয় প্রার্থীরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। পরে নির্বাচিত হলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেননি কোনো জনপ্রতিনিধি। অথচ উপজেলা সদর, ইউনিয়ন পরিষদ, হাট-বাজারসহ জেলার সংযোগ সড়ক এই ব্রিজ।
স্থানীয় আলী আজগর বলেন, প্রতিদিন ওই সড়ক দিয়ে পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ২, ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আশ্রয়ণ প্রকল্পের গ্রাম, খাড়াপাড়া ও ঝাড়সিংহেশ্বর গ্রামসহ আশপাশের এলাকার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে হাজারো মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। বর্ষা মৌসুমে তিস্তার বন্যায় এই অঞ্চলে পলি পরে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় কয়েকগুণ। ধান, গম, ভুট্টা, মরিচ, বাদাম, মিষ্টিআলু, গাজর, পেঁয়াজ, রসুন প্রভৃতি কৃষিপণ্য উজাড় করে দেয় প্রকৃতি। সড়কে একটি ব্রিজের অভাবে বাজারমূল্য থেকে বঞ্চিত তারা।
আরও জানান, বাজারমূল্য থেকে বঞ্চিত হন তা নয়, বর্ষা মৌসুমে শিশুদের এই ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের পুলের ওপর দিয়ে স্কুলে পাঠাতে ভয় হয়। তারা পানিতে পড়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
একই এলাকার পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া শিক্ষার্থী ইমন, সাব্বিরসহ আরও একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, বিশেষ করে বন্যার সময় বিদ্যালয় যেতে অনেক সমস্যা হয়। অনেক ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পাড় হয়ে বিদ্যালয়ে যাই। সড়কের ওই ভাঙা জায়গায় সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাহান বলেন, শুষ্ক মৌসুমে সাঁকো দিয়ে কোনো রকম খাল পারাপার হলেও বর্ষাকালে সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। অনেক দুর্ঘটনাও ঘটে।
স্থানীয় বেলাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত বছর আমার ছেলে সাঁকো থেকে পড়ে আহত হয়। অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করি। কৃষকদের মালপত্র ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দুঃখ-কষ্টের কথা কেউ শোনে না। বর্ষার সময় সাঁকোটি পাড় হওয়া অনেক কষ্টকর। ওই সময় এই খাল পানিতে টইটম্বুর হয়ে থাকে। তখন সাঁকো নড়বড়ে হয়ে যায়।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বলেন, তিস্তা বেষ্টিত নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত এই এলাকার স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী, দরিদ্র কৃষক ও হাজারো পথচারী যাতায়াতের সুবিধার্থে একটি সেতু নির্মাণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনুরোধ করে লাভ হয়নি।
ডিমলা উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সফিউল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আগামীতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্মাণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সেতু নির্মাণে শিগগির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন