বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ৫টি রাবার বাগান থেকে ২২ রাবার শ্রমিককে অপহরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত দেড়টার দিকে উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি মুরুংঝিরি এলাকা থেকে তাদের অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা শ্রমিকদের জন্য মুক্তিপণও দাবি করেছে বলে রাবার বাগানের একজন মালিক জানিয়েছেন।
অপহৃতরা ফোরকান ও শাহজাহান, নুরু মোহাম্মদ কোম্পানি, আহসান উল্লাহ কোম্পানি, হুমায়ুন কোম্পানি ও সোনামিয়া কোম্পানির রাবার বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
অপহৃত শ্রমিকরা হলেন মো. ফারুক (২৬), মো. আইয়ুব আলী (২৬), মো. সিদ্দিক (৪০), মো. আব্দুল খালেক (২০), আব্দুল মাজেদ (১৭), মনিরুল ইসলাম (৩০), জিয়াউর রহমান (৪৫), মো. মোবারক (২৫), মো. হারুল (৩০), সৈয়দ নুর (২৮), রমিজ উদ্দিন (৩০), মো. কায়ছার (৩৮), মো. মনির হোসেন (৩৫), মো. ইমরান (১৭), মঞ্জুর (৩০), আফসার আলী (২৫), মো. খাইরুল আমিন (৩০), আবু বক্কর (২৯), আবদুর রাজ্জাক (৩৩) ও মো. মবিন (২৫)। এরা সবাই কক্সবাজার জেলার রামু ও ঈদগাহ এবং বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাসিন্দা। আরেকজনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন লামা থানার ওসি মো. শাহাদাৎ হোসেন। তিনি বলেন, শ্রমিক অপহরণের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ অপহৃতদের উদ্ধার অভিযানে নেমেছে। ঘটনাস্থল দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় অপহরণের সুযোগ পাচ্ছে সন্ত্রাসীরা।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত অপহৃতদের উদ্ধার সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পাহাড়ি একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ গত দুই-আড়াই মাস ধরে উপজেলার সরই, গজালিয়া, লামা সদর ইউনিয়ন ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি অপহরণসহ নানা অপকর্ম করে আসছে। এ ধারাবাহিকতায় শনিবার রাত দেড়টার দিকে পৃথক ৫টি রাবার বাগান থেকে ২২ শ্রমিককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে বাগানের মালিক মো. শাহজাহান জানান, সন্ত্রাসীরা তার বাগান থেকে ১২ শ্রমিককে নিয়ে গেছে। কিছুদিন আগে সন্ত্রাসীরা এসব শ্রমিকের কাছে ৬ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল, সেই অনুযায়ী চাঁদা না পেয়ে তাদেরকে অপহরণ করে। অপহরণের পর তার কাছে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। অপহৃত অন্যদের কাছ থেকেও পৃথক মুক্তিপণ দাবি করার বিষযটি শুনেছেন বলেও জানায় বাগান মালিক শাহজাহান।
২২ রাবার শ্রমিককে অপহরণের ঘটনায় রাবার, তামাক, গাছ, পাথর, বাঁশ শ্রমিকসহ স্থানীয়দের মাঝে আতংক বিরাজ করছে বলে জানান ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মংমেগ্য মার্মা। ঘটনাস্থল দুর্গম পাহাড়ি এলাকা। সেখানে নেটওয়ার্ক না থাকায় বিস্তারিত পাচ্ছেন না বলেও জানান তিনি।
লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈন উদ্দিন বলেন, ‘অপহরণ কারা করেছে ঠিক জানি না। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির সমন্বয়ে উদ্ধার কাজ চলছে। ওই এলাকায় নেটওয়ার্ক না থাকায় যোগাযোগ করতে পারছি না।’
বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার জানান, রোববার দুপুরে ২০ জন শ্রমিককে অপহরণের খবর পেয়েছি। তবে কম বেশি হতে পারে। অপহৃতদের উদ্ধারে পুলিশ কাজ করছে এবং বিস্তারিত পরে জানা যাবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারিতে একই উপজেলার সরই ইউপি থেকে দুই দফায় ১৪ জন শ্রমিককে অপহরণ করেছিল সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। পরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অক্ষত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করা হয়।
মন্তব্য করুন