জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার ও গবেষক ড. মিজানুর রহমান আজহারি বলেছেন, এ দেশের আসল পরিচয় হলো ইসলাম। যারা ইসলামের কথা বলে, যারা কোরআনের কথা বলে তারা ধর্ম ব্যবসায়ী নয়। আলমদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না। আলেমবিদ্বেষী হবেন না। তাহলে দুনিয়াও শেষ, আখেরাতও শেষ। নিজেকে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড় করাবেন না।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ময়মনসিংহের সার্কিট হাউস মাঠে লাখো তৌহিদি জনতার উদ্দেশে পবিত্র কোরআনের তাফসির মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় ড. আজহারি বলেন, ইসলাম ছাড়া আমরা অন্যকিছু মানি না, মানবো না। ইসলামবিরোধী কোনো মতবাদ মানবো না। ইসলাম আছে, ইসলাম থাকবে। যারা ইসলামকে মাটির নিচে পুঁতে রাখতে চায়, ওরা জানে না ইসলামের ধর্ম কী। ইসলাম চারা বীজের মতো, ইসলামকে জমিনে গেড়ে দিলে শাখা-প্রশাখার মতো আসমানের দিকে উঠে যায়।
তিনি বলেন, এ পৃথিবীতে সবচেয়ে দামি হলো বিশ্বাস। বিশ্বাস ছাড়া জগত চলে না। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কীসের ওপর টিকে থাকে। বিশ্বাসের ওপর টিকে থাকে। পার্টনারশিপের ব্যবসাও টিকে থাকে বিশ্বাসের ওপর। বিশ্বাসীরা টিকে না থাকলে পৃথিবী আল্লাহ টিকিয়ে রাখতেন না। একজন বিশ্বাসী বেঁচে থাকলে আল্লাহ পৃথিবী ধ্বংস করবেন না। তিনি বলেন, ৬টি বিষয়ে বিশ্বাস রাখাই হলো ঈমান। ইমান ছাড়া নেক আমলের কোনো স্বীকৃতি নেই। যার হৃদয়ে ইমান আছে, সেই সফল। সফল হয়েছেন যারা, ইমান এনেছেন তারাই। ইমান হলো সফলতার মাপকাটি।
তিনি বলেন, মিথ্যা হলো মহাপাপ। মোবাইল ফোনের কারণে মিথ্যা আরও বেড়েছে। আমাদের অনেকেই মিথ্যা বলেন। আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন, আমাদের দেশে মিথ্যা সাক্ষ্যে অনেকের ফাঁসিও হয়েছে। আমার নবী (সা.) জীবনে একটা মিথ্যাও বলেননি। মিথ্যাবাদীদের সাপোর্ট করা যাবে না। সত্য মানুষকে পুণ্যের পথ দেখায়। মিথ্যা মানুষকে পাপের পথ দেখায়। আর পাপ মানুষকে জাহান্নামের পথ দেখায়। এক্ষেত্রে আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনি কোন পথে যাবেন।
তিনি আরও বলেন, ধৈর্যশীল নারী ও পুরুষকে আল্লাহ পছন্দ করেন। বিপদ এলে ধৈর্যের সঙ্গে সবর করতে হবে। বিপদে ধৈর্যধারণ করতে হবে। ধৈর্যই হলো আমাদের শক্তি। ধৈর্য এমন একটি গাছ। এটার ফল সুমিষ্ট। ধৈর্যধারণ করুন, ভালো ফলাফল পেয়ে যাবেন। ধৈর্যধারণকারীদের সঙ্গে আল্লাহ আছেন। মুমিনরা ধৈর্যধারণ করেন বলেই সুফল অর্জন করেন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় ঐতিহাসিক সার্কিট হাউস মাঠ। চোখ যতদূর যায়, শুধু মানুষ আর মানুষ দেখা যায়। লাখো জনতার উপস্থিতির কারণে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে গেলে সাধারণত নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না বলে মোবাইল কোম্পানি বাংলালিংক মাহফিল এলাকায় অস্থায়ীভাবে একটি টাওয়ার বসায়।
এ মাহফিলকে সফল করতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন ইসলামি দল, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ছিল। মাহফিলের দুই লাখ বর্গফুটের প্যান্ডেল ছাড়াও ১৬ একর সার্কিট হাউস মাঠ উপচে মানুষের ঢল নামে আশপাশের পার্ক ও সড়কগুলোতে। এছাড়াও জিলা স্কুল মাঠ, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল মাঠসহ উমেদ আলী মাঠেও মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ে। জিলা স্কুল হোস্টেল মাঠে কয়েক হাজার নারীর উপস্থিতি ছিল। মাঠসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ২২টি এলইডি পর্দার ব্যবস্থা করা হয়।
তিনটি মেডিকেল ক্যাম্প, চার শতাধিক অজুখানা ও ওয়াশরুম এবং পর্যাপ্ত খাবার পানির ব্যবস্থাও ছিল। গোটা নগরীর ছিল অনেকটাই ফাঁকা। যেন মানুষের ঢল নেমেছিল মাহফিল এলাকায়। মাহফিলকে কেন্দ্র করে ১০ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছে বলে অনেকেরই ধারণা। সকাল ৮টায় মহফিল শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় ড. আজহারির বক্তব্য ও দোয়ার মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়। শুক্রবার রাত থেকেই মাহফিলস্থলে জনতার ঢল নামে।
এ মাহফিলে প্রায় ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকসহ বিজিবি, বিপুল সংখ্যক র্যাব, পুলিশ ও আনসার ভিডিপির সদস্য নিয়োজিত ছিলেন।
শতবর্ষী আলেমে দ্বীন হাফেজ মাওলানা নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক শহীদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় মাহফিলে শুভেচ্ছা বক্তব্য দে-ন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মিডিয়া বিভাগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মু. কামরুল হাসান মিলন ও যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান সোহেল।
মাহফিলে অন্যদের মধ্যে বয়ান করেন- প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ শাইখ শাহ ওয়ালী উল্লাহ, বেতার ও টিভির তাফসিরকারক শাইখ মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন ও মাওনালা মনিরুল ইসলাম মজুমদার।
ড. মিজানুর রহমান আজহারি মঞ্চে উপস্থিত হলে আয়োজক কমিটি আল ইসলাম ট্রাস্ট এবং বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। একই সময়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সসহ বিএনপির নেতারাও তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
মন্তব্য করুন