নীলফামারীর ডিমলায় বন বিভাগের নিজস্ব ফরেস্টে ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস গাছের বিস্তার ঘটেছে। বন বিভাগের ক্ষতিকর তালিকার শীর্ষে গাছটির নাম। এরপরও ডিমলা ফরেস্টসহ গোটা উপজেলায় বেশ প্রসিদ্ধ ঘাতক গাছ ইউক্যালিপটাস।
২০০৮ সালে সরকার পরিবেশের ক্ষতির কারণ দেখিয়ে বনায়নের জন্য ইউক্যালিপটাস গাছ নিষিদ্ধ করে, তবে ডিমলা ফরেস্টে এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কয়েক বছর আগে হাজার হাজার ইউক্যালিপটাস গাছ লাগায় বন বিভাগ। উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও আবাদি জমিতে থেমে নেই ক্ষতিকর এ গাছের আগ্রাসন।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা গেছে, ডিমলা ফরেস্টে কয়েক হাজার ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ করা হয়েছে। যেখানে অন্যান্য বনজ ও ঔষধি গাছ থাকার কথা। এ ছাড়াও পুরো উপজেলার সড়কজুড়ে ইউক্যালিপটাসের উপস্থিতি। এর বিস্তৃতি ছড়িয়ে আছে আবাদি জমিতেও। এ অঞ্চলে সব ধরনের মাটিতে দ্রুত বেড়ে ওঠে ও বিক্রি করলে দামও বেশ, তাই এ গাছের রয়েছে লোভনীয় চাহিদা। গাছটির কারণে পরিবেশবান্ধব ফলজ ও ঔষধি গাছ আজ হুমকির মুখে।
পরিবেশবিদদের মতে, এমন কিছু গাছ রয়েছে, যেগুলো মানুষের উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি করে। তেমনই একটি গাছ হলো ইউক্যালিপটাস। যদিও এই গাছটি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য অনেক স্থানে জনপ্রিয়, তবে এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে বিবেচিত।
এই দৈত্যাকার গাছটি মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে। আমাদের দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাটির ধরন ইউক্যালিপটাসের জন্য অনুকূল। মাত্র একটি ইউক্যালিপটাস গাছ তার আশপাশের ১০ ফুট এলাকার এবং ভূগর্ভের ৫০ ফুট নিচের পানি পর্যন্ত শুষে নিতে পারে এবং প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়।
ডিমলা উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব নার্সারি মালিক তাদের নার্সারিতে এই ইউক্যালিপটাসের চারা ব্যাপক হারে উৎপাদন করেন। দ্রুত বর্ধনশীল, শক্ত কাঠ ও কম জায়গায় স্বল্প খরচে বেশি চারা উৎপাদন করা যায় ফলে নার্সারি মালিকরা এখন সারা বছরই ইউক্যালিপটাস গাছের চারা উৎপাদন করে থাকেন।
ডিমলা ফরেস্টে ইউক্যালিপটাস গাছের দ্রুত বৃদ্ধি এক চিন্তার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এই গাছের অবাধ বৃদ্ধি স্থানীয় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপরও এই সমস্যা সমাধানে স্থানীয় বন বিভাগের পক্ষ থেকে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না, এমন অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার ফরেস্ট এলাকার বাসিন্দারা জানান, এই গাছের বিষাক্ত পাতা ঝরে পড়লে মাটি ও পানি পর্যন্ত কালো হয়ে যায়। এই গাছের আশপাশে যদি ফসল থাকে উৎপাদন একেবারেই কমে যায়। ইউক্যালিপটাস গাছের কারণে পরিবেশের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার কবে।
উপজেলার গয়াবাড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা মিজানুর বলেন, এই গাছ সব জায়গাতেই লাগানো যায় এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বেড়ে ওঠে। মোটা হলে ভালো দাম পাওয়া যায়। বিশেষ করে ঘরের কাজে এই গাছের কাঠ বেশি ব্যবহার করা হয়। এ কারণে এই গাছের চাহিদা বেশি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, উত্তরবঙ্গে ইউক্যালিপটাসের সংখ্যা ও প্রভাব সম্পর্কে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা নেই। তবে বন ও পরিবেশ বিভাগ স্বীকার করেছে যে, আশির দশকে সরকারি সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় ইউক্যালিপটাসসহ বিভিন্ন বিদেশি গাছ বাংলাদেশে আনা হয়েছিল এবং বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল।
ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মীর হাসান আল বান্না বলেন, ইউক্যালিপটাস গাছ মাটি থেকে প্রচুর পানি শোষণ করে ও অক্সিজেন গ্রহণ ক্ষমতা একটু বেশি। এই গাছের ঝরা পাতা মাটির পুষ্টিগুণ ঘাটতি তৈরি করে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে। আবাদি জমির আশপাশে থাকলে অবশ্যই ক্ষতি করে। তবে এই গাছ নিয়ে বিভিন্ন দ্বিমত রয়েছে, তাই আরও গবেষণা করা প্রয়োজন।
নীলফামারী জেলা সামাজিক বন বিভাগের (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, গাছগুলো যখন লাগানো হয়েছে তখন সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধ ছিল না, তাই এ গাছ রোপণ করা হয়েছে। তবে এখন আমার নতুন করে আর এ গাছ রোপণ করছি না।
বর্তমানে বিদ্যমান বাগান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন কোনো পদক্ষেপ নেই। এগুলো এ অবস্থায় থাকবে। তবে যদি ওপর থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয় তখন দেখা যাবে।
মন্তব্য করুন