মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ

পিঠা বিক্রি করে সংসার চলছে সাবেক বিডিআর সদস্য হাবিবুরের

পিঠা বিক্রি করছেন সাবেক বিডিআর সদস্য মো. হাবিবুর রহমান। ছবি : কালবেলা
পিঠা বিক্রি করছেন সাবেক বিডিআর সদস্য মো. হাবিবুর রহমান। ছবি : কালবেলা

২০০৯ সালে আলোচিত পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর কারাগার ভোগের পর ২০১৬ সালে জামিন পেয়ে বাড়ি যান সাবেক বিডিআর সদস্য মো. হাবিবুর রহমান। পরিবারের সবাই খুশি হলেও কিছুদিন পর থেকে অর্থের অভাবে পরিবারের খরচ জোগাতে দিশাহারা হয়ে পড়েন। নেই খাবারের কিংবা অসুখের চিকিৎসার নিশ্চয়তা। অভাবের তাড়নায় কোনো কিছুর উপায় না পেয়ে বর্তমানে প্রতিদিন একটি বাজারে খোলা আকাশের নিচে চিতই পিঠা বিক্রি করে সংসার চালান তিনি। শেষ বয়সে পেনশনের দাবি তার।

সাবেক বিডিআর সদস্য মো. হাবিবুর রহমান নওগাঁর মান্দা উপজেলার কশব ইউনিয়নের চকসিদ্বেশ্বরী গ্রামের বাসিন্দা। পরিবারে তার এক ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছেন। তিনি মৃত-হাছেন আলীর ছেলে। ১৯৭৮ সালের অক্টোবরে বিডিআর সদস্য হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন এবং তিনি ল্যান্স নায়েক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন।

জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় বিস্ফোরক ও নাশকতায় মামলার আসামি করে সেদিন দুপুর ১২টার দিকে পিলখানার ভেতর থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। তারপর কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। দীর্ঘ সাড়ে ৬ বছর কারাভোগের পর ২০১৬ সালের আগস্টে খালাস পেয়ে নিজ গ্রামের বাড়িতে যান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মান্দা উপজেলার কশব ইউনিয়নের পাঁজরভাঙ্গা হাটে চৌরাস্তা মোড়ে খোলা আকাশের নিচে সকাল সকাল চিতই পিঠা বিক্রি করেছেন সাবেক বিডিআর সদস্য ল্যান্স নায়েক হাবিবুর রহমান। চোখে মুখে যেন তার একরাশ হতাশা। সেখানে বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ পিঠা খেতে আসছেন। অন্যদিকে তার বসায় গিয়ে দেখা যায়, ঘরের ওয়ালে টাঙানো আছে যুবক বয়সে বিডিআর ইউনিফর্ম পরা ছবি।

কান্নাকণ্ঠে সাবেক বিডিআর সদস্য মো. হাবিবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, আমার কোনো দোষ ছিল না। অন্যায়ভাবে সাড়ে ৬ বছর কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল। অপরাধ করিনি। জামিনে বাড়ি এসে আরেক কষ্ট। টাকার অভাবে বাজার করতে পারি না, চিকিৎসা করাতে পারি না, আমার ডান পায়ের অবস্থা খারাপ। অর্থের অভাবে আমি কোনো দিশা পাচ্ছি না। বাজার করব কী দিয়ে? কাপড় কিনব কী দিয়ে? এখন বয়স হয়েছে কোনো কাজ কর্ম করতে পারি না। উপায় না পেয়ে বাজারে চিতই পিঠা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছি। সরকারের কাছে আকুল আবেদন, শেষ বয়সে আমার একটা পেনশনের ব্যবস্থা হয়।

স্ত্রী মোছা. আলেয়া জানান, আমার স্বামী যখন চাকরি করত তখন ছেলে মেয়ে নিয়ে খুব ভালোই ছিলাম। হঠাৎ পিলখানায় হত্যা কাণ্ডের ঘটনায় বিনা দোষে আমার স্বামীকে দীর্ঘদিন জেলে থাকতে হয়। শুরু হয় অভাবের সংসার। বর্তমানে বাজারে চিতই পিঠা বিক্রি করে কোনো মতে সংসার চলে। এক মাত্র ছেলে পড়াশোনা শেষ করেও চাকরি নেই তার। সরকার কাছে একটাই দাবি শেষ বয়সে আমার স্বামীকে পেনশনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।

চিতাই খেতে আসা চকসেদ্ধশ্বী গ্রামের বাসিন্দা মো. লতিফ হোসেন বলেন, আমরা জানি তিনি বিডিআরে চাকরি করত। পিলখানায় সেই আলোচিত ঘটনায় চাকরি হারায় এবং কারাভোগ করেন। এরপর জামিন পেয়ে বাড়ি এসে অভাবের তাড়নায় বাজারে চিতই পিঠা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

পাঁজরভাঙ্গা বাজারের দোকানদার শ্রী সঞ্চয় কুমার জানান, বেশ কিছুদিন ধরে এই বাজারে চিতই বিক্রি করেন তিনি। জেনেছি তিনি একসময় বিডিআরে চাকরি করেছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে জেলে ছিল।

এ বিষয়ে কশব ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. রমজান আলী জানান, চকসিদ্ধেশ্বরী গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান। তিনি বিডিআরের চাকরি করা অবস্থায় পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দীর্ঘদিন জেলে ছিল। জামিন পেয়ে বাড়ি আসার পর অভাব অনটনে দিন কাটে তার। এখন বাজারে চিতই পিঠা বিক্রি করতে দেখা যায়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এখন হবে কোরআনের বাংলাদেশ : ডা. শফিকুর রহমান

সুন্দরবনে নৌকায় ৬২ কেজি হরিণের মাংস ফেলে পালাল শিকারিরা

কুমিল্লায় জামায়াতের প্রথম নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ফাগুনের দুপুরে রাজধানীতে একপশলা বৃষ্টি

জবি ‘এ’ ইউনিটের প্রথম শিফটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত, কেমন হলো প্রশ্ন

ব্যবহার শেষে কলম মাটিতে ফেললে জন্মাবে গাছ

গাজীপুরে অপারেশন ডেভিল হান্টে গ্রেপ্তার ২৬

রাজশাহীতে জমি নিয়ে বিরোধে বিএনপি-আ.লীগের সংঘর্ষ, নারী নিহত

ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকে গঠন বিএনপির পক্ষে সম্ভব : তারেক রহমান

সাভারে বকেয়া বেতনের দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

১০

জুলাই আন্দোলনের শিক্ষককে বদলি, সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড়

১১

নতুন করে দেশ গড়তে সবাইকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের

১২

মালয়েশিয়ায় ৮৫ বাংলাদেশিসহ ৫৯৮ অভিবাসী আটক

১৩

গোপালগঞ্জে দুই বাসের সংঘর্ষ, প্রাণ গেল চালক-সুপারভাইজারের

১৪

স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবার মান ও দাম নিয়ে গণশুনানির আহ্বান

১৫

‘বাংলাদেশের সংকটে জিয়া পরিবার পাশে ছিল’

১৬

নিজেদের পাতানো ফাঁদে প্রাণ গেল স্বামী-স্ত্রীর

১৭

চীনে নতুন করোনাভাইরাস, আবারও ছড়ানোর শঙ্কা

১৮

ডিপিএলে খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন সাকিব

১৯

নরসিংদীতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে আহত ৬৩

২০
X