মানিকগঞ্জের শিবালয়ে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে গোবিন্দ চন্দ্র শীল (২৮) নামে এক শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে আটক করে পুলিশ।
আটক গোবিন্দ চন্দ্র শীল শিবালয় অক্সফোর্ড একাডেমির ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক এবং ঘিওর উপজেলার করোটিয়া সাহাপাড়া এলাকার শ্যামল চন্দ্র শীলের ছেলে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার ঘটনার পর ভুক্তভোগী ছাত্রী বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি জানালে তিনি গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো ছাত্রীকে চুপ থাকার নির্দেশ দেন। এমনকি তাকে ক্লাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তার পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে অভিযুক্ত শিক্ষক গোবিন্দ চন্দ্র শীলের সঙ্গে মীমাংসার জন্য।
ভুক্তভোগী ছাত্রী জানায়, বুধবার টিফিনের সময় চারতলায় বান্ধবীদের খুঁজতে গেলে নামার পথে শিক্ষক গোবিন্দ চন্দ্র শীল পেছন থেকে জাপটে ধরে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয় এবং কুপ্রস্তাব দেয়। অনেক চেষ্টা করে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে নিচে নেমে যাই। পরে সিনিয়র আপুদের জানালে তারা আমাকে প্রধান শিক্ষকের কাছে পাঠান। কিন্তু প্রধান শিক্ষক বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে বলেন, বাড়িতে জানানোর দরকার নেই, ক্লাসে যাও। এরপর আরও কয়েকজন শিক্ষক কটু কথা বলেন আমাকে নিয়ে।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা বলেন, ‘ঘটনার পর আমার মেয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে বিচার চাইতে গেলে তিনি উল্টো ক্লাসে পাঠিয়ে দেন। ঘটনার পর মেয়েকে দুইবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আত্মহত্যার চেষ্টা করতে দেখি। কোনোভাবে বুঝিয়ে বাসায় এনেছি। প্রধান শিক্ষক আমাদের বিদ্যালয়ে ডাকেন, কিন্তু সেখানে এক শিক্ষক বলেন, ‘এটা কোনো ব্যাপার না, অনেক জায়গায় শিক্ষক-ছাত্রীর বিয়ে হয়।’
ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, ‘শিক্ষক গোবিন্দ চন্দ্র শীলকে বাঁচাতে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন করে আমাকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। আমার মেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। আমি অভিযুক্ত শিক্ষক ও তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করা অন্য শিক্ষকদের কঠিন শাস্তি দাবি করছি।’
তবে শিক্ষক গোবিন্দ চন্দ্র শীলকে রক্ষার অভিযোগ অস্বীকার করে অক্সফোর্ড একাডেমির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ঘটনা জানার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর চেষ্টা করি, কিন্তু তিনি না থাকায় উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’
শিবালয় থানার ওসি এ. আর. এম. আল-মামুন বলেন, ‘ভুক্তভোগীর বাবা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করা হয়েছে। মামলার প্রক্রিয়া চলছে এবং তদন্তসাপেক্ষে বাকিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের কঠিন শাস্তি ও বিদ্যালয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি তুলেছেন অভিভাবকরা। কেউ কেউ বলছেন, শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ রাখতে না পারেন, তবে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের কার কাছে পাঠাবেন?
মন্তব্য করুন