সুন্দরবনের দুবলার চর এলাকা থেকে অপহৃত ১৫ জেলের মধ্যে ৯ জনকে মুক্তি দিয়েছে ডাকাতরা। মাথাপিছু ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা মুক্তিপণের পর অপহরণের শিকার জেলেদের চোখ বেঁধে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ এলাকায় সুন্দরবন থেকে ওপরে উঠিয়ে দিয়ে যায় ডাকাতরা।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ৩টার দিকে অপহরণের শিকার জেলেরা বাড়িতে পৌঁছায়। ওই জেলেদের মধ্যে ৭ জনের বাড়ি আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নে। একজনের বাড়ি শ্যামনগরে ও আরেকজনের বাড়ি খুলনায়।
ফিরে আসা জেলেরা হলেন- সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের সুভদ্রাকাটি গ্রামের মো. দাউদ আলী সানার ছেলে অজাহারুল ইসলাম, রুইয়ারবিল গ্রামের জুলফিকার সরদারের ছেলে আলমগীর হোসেন, একই গ্রামের শহর আলী গাজীর ছেলে হাফিজুর রহমান, আব্দুল হক সানার ছেলে মো. শাহীনুর আলম, দিঘালারাইট গ্রামের মো. আবু দাউদ জদ্দারের ছেলে মো. রাসেল, শ্রীপুর গ্রামের মো. রুহুল আমিন ঢালির ছেলে মো. শাহাজান ঢালী ও দৃষ্টিনন্দন গ্রামের মো. আনিচ সরদারের ছেলে নুরে আলম এবং শ্যামনগর উপজেলার বন্যতলা গ্রামের আবু তালেবের ছেলে শাহ্ আলমসহ ৯ জন।
মুক্তিপণের টাকা দিতে না পারায় বাকি ৬ জনকে এখনো আটক রেখেছে ডাকাতরা। এদের মধ্যে সাতক্ষীরার আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামের মো. মহিজুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলম, একই গ্রামের মো. নুরমান আলী সরদারের ছেলে অরাফাত হোসেন ও শামছুর রহমান গাজীর ছেলে শাহাজান গাজী।
অপহৃত চাকলা গ্রামের শাহাজান গাজীর স্ত্রী নাজমা খাতুন জানান, স্বামী বাড়ি আসছে খবর পেয়ে গতকাল রাত ৩টা পর্যন্ত জেগে বেড়িবাঁধের ওপর বসে ছিলাম। কিন্তু প্রতাপনগরের সাতজন আসলেও আমার স্বামীসহ আমাদের চাকলা গ্রামের তিনজন ফিরে আসেনি। এত টাকা আমার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব না। তিনি স্বামীকে মুক্ত করে আনার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রতাপনগর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার গোলাম রসুল জানান, মাথাপিছু ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নিয়ে অপহৃত ১৫ জেলের মধ্যে ৯ জনকে মুক্তি দিয়েছে ডাকাতরা। বাকি ৬ জনের মধ্যে আমার গ্রামের তিনজন রয়েছে। মুক্তিপণের টাকা দিতে না পারায় তাদেরকে এখনো জিম্মি করে রেখেছে ডাকাতরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতাপনগর গ্রামের এক ব্যক্তি বলেন, সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও কোস্টগার্ড, র্যাব, বন বিভাগ, পুলিশ কার কী ভূমিকা ছিল? কেন গত ৩ সপ্তাহে ডাকাতের ধারে কাছেও যেতে পারেনি এসব বাহিনীর সদস্যরা? অথচ জেলেদের পরিবার নিয়মিত মোবাইলে ডাকাতদের সঙ্গে যোগাযোগ ও বিকাশে মুক্তিপণের টাকা লেনদেন করেছে। তাহলে কেন তাদের কাছে যেতে পারল না সরকারি বাহিনীগুলো? বাকিদের ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি প্রশাসনকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান।
প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু দাউদ ঢালী তার ইউনিয়নের ৭ জন জেলে ফিরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বাকিদের কাছে নৌকা থাকায় এবং মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ না হওয়ায় ডাকাতরা তাদের ছাড়েনি।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ জানুয়ারি ভোর ৬টার দিকে সুন্দরবনের ডাকাত দয়াল বাহিনী সদস্যরা সুন্দরবনের দুবলার চরের নিরীহ জেলেদের ওপর আক্রমণ করে। এ সময় দুঃসাহসী জেলেরা নিজেদের আত্মরক্ষার্থে ডাকাতদের প্রতিহতের চেষ্টা করে এবং একই সঙ্গে দুবলার চরের কোস্টগার্ড স্টেশনে সাহায্য চেয়ে ফোন করে। ডাকাতদের সঙ্গে জেলেদের হাতাহাতির একপর্যায়ে জেলেরা তিন ডাকাতকে জাল দিয়ে ধরে ফেলে। কিন্তু এ সময় ডাকাতরা সেখান থেকে ১৫ জেলেকে ধরে নিয়ে যায়।
মন্তব্য করুন